Triangulum Galaxy


Triangulum Galaxy

ট্রায়াঙ্গুলাম হচ্ছে একটি সর্পিল ছায়াপথ, যেটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২.৭৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে Triangulam নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত । এটিকে Messier 33 (M33) বা NGC (New General Catalouge) 598 হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে । এ ছায়াপথে একটি H II নিউক্লিয়াস রয়েছে । যদিও ছায়াপথের নিউক্লিয়াসে একটি অতিভারবিশিষ্ট কৃষ্ণ গহ্বর আছে বলে মনে হয় না । কারণ, একটি ছায়াপথের কেন্দ্রীয় অতিভারবিশিষ্ট কৃষ্ণ গহ্বরের ভর ছায়াপথের কেন্দ্রীয় স্ফীতির আকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত । M33 বা ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ Andromeda Galaxy (অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ) এবং Milky Way Galaxy (আকাশগঙ্গা ছায়াপথ) থেকে ভিন্ন । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ হচ্ছে একটি বিশুদ্ধ চাকতি ছায়াপথ যার কোনো স্ফীতি নেই । তবে, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা Chandra X-ray Observatory থেকে তথ্য ব্যবহার করে এ ছায়াপথে সূর্যের ভরের প্রায় ১৫.৭ গুণ একটি কৃষ্ণ গহ্বর সনাক্ত করেন । M33 X-7 নামক কৃষ্ণ গহ্বরটি একটি সহচর নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে যা এটি প্রতি ৩.৫ দিনে গ্রহন (Eclipse) করে । জানা যায়, এটি সবচেয়ে বড় নাক্ষত্রিক ভরের একটি কৃষ্ণ গহ্বর । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ এবং আকাশগঙ্গা ছায়াপথের পিছনে অবস্থিত ছায়াপথগুলোর স্থানীয় গোষ্ঠীর তৃতীয় বৃহত্তম সদস্য (যদিও ছোট-বড় এবং ছোট Magellanic মেঘগুলো আকাশগঙ্গার সাথে মুখোমুখি হওয়ার আগে সর্পিল হয়ে থাকতে পারে) এবং রাতের আকাশে তাদের মিথস্ক্রিয়া, বেগ ও একে অপরের নৈকট্যের কারণে এন্ড্রোমিডা ছায়াপথের একটি উপগ্রহ বা পরবর্তীতে এটির প্রত্যাবর্তন বলে মনে করা হয় । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ হচ্ছে প্রায় ৪০ বিলিয়ন নক্ষত্রের আবাসস্থল, যেখানে আকাশগঙ্গা ছায়াপথে ৪০০ বিলিয়ন এবং অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথে ১ ট্রিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে । স্কটল্যান্ডের ঔপন্যাসিক ও এডিনবার্গ সংবাদপত্রের প্রাক্তন সাহিত্য সম্পাদক Andrew Crumey দেখিয়েছেন যে, এ ছায়াপথের মোট আপাত দৃশ্যমান মাত্রা ৫.৭২ এবং কার্যকর দৃশ্যমান মাত্রা প্রায় ৬.৬ । ক্ষীণ আলো বা খুব অন্ধকার স্থান থেকেও এটিকে দেখা যায় । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথকে কখনো কখনো অনানুষ্ঠানিকভাবে Pinwheel Galaxy বলা হয় । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথটি সম্ভবত ১৬৫৪ খ্রিস্টাব্দের আগে ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী Giovanni Battista Hodierna আবিষ্কার করেন । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫-২৬ আগস্ট রাতে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী Charles Messier ছায়াপথটি স্বাধীনভাবে আবিষ্কার করেন এবং এটি তার Catalog of Nebulae and Star Clusters (1771) এ বস্তু নম্বর ৩৩ হিসেবে প্রকাশিত হয় । তাই ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথটির নাম Messier 33 (M33) । জার্মান-ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং সুরকার Frederick William Herschel ১১ই সেপ্টেম্বর ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে এ মহাজাগতিক বস্তুটিকে H V-17 হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন । ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে আইরিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রকৃতিবিদ এবং প্রকৌশলী Lord Rosse একটি ‘সর্পিল নীহারিকা’ (Spiral nebulae) এর মধ্যে ছায়াপথটি ছিল এটি তিনি প্রথম চিহ্নিত করেন । ১৯২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী John Charles Duncan এবং জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী Maximilian Franz Joseph Cornelius Wolf (Max Wolf) নীহারিকাতে পরিবর্তনশীল নক্ষত্র আবিষ্কার করেন । মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী Edwin Powell Hubble ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে দেখিয়েছিলেন যে, এ নক্ষত্রগুলোর মধ্যে ৩৫টি হচ্ছে Classical Cepheid । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ হচ্ছে স্থানীয় ছায়াপথ গোষ্ঠীর তৃতীয় বৃহত্তম সদস্য । এ ছায়াপথের ডি২৫ আইসোফোটাল ব্যাস ১৮.৭৪ কিলোপারসেক (৬১১০০ আলোকবর্ষ), যেখানে ছায়াপথ পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতা ২৫ম্যাগ/আর্কসেক২ এ পৌঁছায় এবং এটি শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ আকাশগঙ্গা ছায়াপথের আকারে পরিণত করে । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথটি অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সঙ্গী হতে পারে ।
ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ চাকতির আনুমানিক ভর (৩–৬)×১০৯ সৌর ভর, যেখানে গ্যাসের উপাদানটি প্রায় ৩.২×১০৯ সৌর ভর । সুতরাং, ছায়াপথের সমস্ত Baryonic পদার্থের মিলিত ভর ১০১০ সৌর ভর হতে পারে । ৫৫×১০৩ আলোকবর্ষ (১৭ কিলোপারসেক) ব্যাসার্ধে অন্ধকার পদার্থের (Dark matter) উপাদানের অবদান প্রায় ৫×১০১০ সৌর ভরের সমান । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ হচ্ছে H2O Maser (Astrophysical Maser) নিঃসরণের উৎস এবং অনুমান করা হয়, ছায়াপথটি অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে হাইড্রোজেন গ্যাসের একটি অগোছালো স্রোত (Clumpy stream of hydrogen gas) ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের সাথে অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথকে যুক্ত করার প্রমাণ পাওয়া যায় । মীন বামন বা The Pisces Dwarf (LGS 3) ছোট স্থানীয় গোষ্ঠীর সদস্য ছায়াপথগুলোর মধ্যে একটি এবং সূর্য থেকে ২০২২×১০৩ আলোকবর্ষ (৬২০ কিলোপারসেক) দূরে অবস্থিত । এ মীন বামন ছায়াপথটি অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ থেকে ২০° এবং ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ থেকে ১১° দূরে অবস্থিত । যেহেতু, মীন বামন LGS 3 ছায়াপথ ঐ ছায়াপথ দুটি থেকে ৯১৩×১০৩ আলোকবর্ষ (২৮০ কিলোপারসেক) দূরত্বে অবস্থিত, হয়তো এটি অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ কিংবা ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের একটি উপগ্রহ ছায়াপথ হতে পারে । মীন বামন LGS 3 ছায়াপথের মূল ব্যাসার্ধ ৪৮৩ আলোকবর্ষ (১৪৮ কিলোপারসেক) এবং ২.৬×১০৭ সৌর ভর রয়েছে । মীন VII/Triangulum (Tri) III ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের আরেকটি উপগ্রহ হতে পারে ।
ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী Gérard de Vaucouleur ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথকে SA(s)cd ধরণ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেন । ট্রায়াঙ্গুলাম একটি চাকতি আকৃতির ছায়াপথ যার বিশিষ্ট বাহুগুলো গ্যাস এবং ধূলিকণা নিউক্লিয়াস থেকে সর্পিলাকার হয়— যে কারণে এটি সর্পিল ছায়াপথ নামে পরিচিত । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের ভিতরের অংশে দুটি আলোকিত সর্পিল বাহু রয়েছে এবং সাথে একাধিক স্ফটিক বা শক্ত খুঁটি (Spar) রয়েছে যা ভিতরের অংশকে বাইরের সর্পিল বৈশিষ্ট্যের সাথে সংযুক্ত করে । তাই, এখানে গ্যাস ও ধূলিকণা থাকার কারণে খুব দ্রুত নক্ষত্র গঠন করে ।
ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের চারপাশে একটি বর্ণবলয় (Halo) থাকতে পারে, কিন্তু নিউক্লিয়াসে কোনো স্ফীতি নেই । ট্রায়াঙ্গুলাম একটি বিচ্ছিন্ন ছায়াপথ এবং অন্যান্য ছায়াপথগুলোর সাথে সাম্প্রতিক একত্রিতকরণ বা মিথস্ক্রিয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই । এ ছায়াপথের কেন্দ্রীয় ৪′ অঞ্চলে পারমাণবিক গ্যাস দক্ষতার সাথে আণবিক গ্যাসে রূপান্তরিত হচ্ছে, যার ফলে কার্বন মনোস্কাইডের একটি শক্তিশালী বর্ণালী নির্গমন ঘটে । আশেপাশের আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম থেকে বিশাল আণবিক মেঘ ঘনীভূত হওয়ার কারণে এ প্রভাবটি ঘটে থাকে । কেন্দ্রীয় ৪′ এর বাইরে অনুরূপ প্রক্রিয়া চলছে, তবে কম কার্যকর গতিতে । এ ছায়াপথে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ গ্যাসের উপাদান আণবিক আকারে রয়েছে । নক্ষত্র গঠন এমন একটি হারে ঘটছে যা স্থানীয় গ্যাসের ঘনত্বের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং প্রতি একক অঞ্চলের হার প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের চেয়ে বেশি । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথে নক্ষত্র গঠনের হার প্রায় ৩.৪ Gyr−১ pc−২, অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথে ০.৭৪ এর তুলনায় । তবে এটি অনিশ্চিত যে, এ নেট হার বর্তমানে কমছে না-কি স্থির আছে । ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথে একটি গ্রহনকারী বাইনারি নক্ষত্র (Eclipsing Binary Star) আবিষ্কার করেন ।
স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ থেকে অবলোহিত পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের মধ্যে ২৪ μm নির্গমনের মোট ৫১৫ বিচ্ছিন্ন প্রার্থী উৎস তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ৷ উজ্জ্বল উৎসগুলো ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এবং সর্পিল বাহু বরাবর রয়েছে ৷ নির্গমনের অনেক উৎসই নক্ষত্র গঠনের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বৃহত্তম H II অঞ্চলের সাথে যুক্ত । চারটি উজ্জ্বল HII অঞ্চলকে NGC 588, NGC 592, NGC 595 এবং NGC 604 হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে । এ অঞ্চলগুলো (১.২-৪) ×১০৫ সৌর ভরযুক্ত আণবিক মেঘের সাথে যুক্ত । এ সকল অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হচ্ছে NGC 604, যা প্রায় তিন মিলিয়ন বছর আগে নক্ষত্র গঠনের একটি বিচ্ছিন্ন বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকতে পারে । এ নীহারিকা হচ্ছে স্থানীয় গোষ্ঠীর ছায়াপথের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক আলোকিত HII অঞ্চল, সূর্যের আলোর (৪.৫ ± ১.৫)×১০৭ গুণ বেশি । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথের অন্যান্য বিশিষ্ট HII অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে IC 132, IC 133 এবং IK 53 । ছায়াপথের উত্তরের প্রধান সর্পিল বাহুতে চারটি বড় HII অঞ্চল রয়েছে, যেখানে দক্ষিণ বাহুতে তরুণ ও উষ্ণ নক্ষত্রের ঘনত্ব বেশি । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথে অতিনবতারা (Supernova) বিস্ফোরণের আনুমানিক হার হচ্ছে ০.০৬ ধরণের Ia এবং ০.৬২ ধরণের Ib/ধরণ II প্রতি শতকে । এটি গড়ে প্রতি ১৪৭ বছরে একটি অতিনবতারা বিস্ফোরণের সমান । ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী, ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথে মোট ১০০টি অতিনবতারার অবশিষ্টাংশ সনাক্ত করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই সর্পিল ছায়াপথের দক্ষিণ অর্ধেকের মধ্যে অবস্থিত । H I ও H II অঞ্চলগুলোর জন্য অনুরূপ অসামঞ্জস্য এবং বিশাল O (O V) ধরণের প্রধান নক্ষত্রগুলোর উচ্চ আলোকিত ঘনত্ব রয়েছে । এ বৈশিষ্ট্যগুলোর বিতরণ কেন্দ্রটি দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় দুই আর্ক মিনিট Offset হয় । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথ একটি স্থানীয় ছায়াপথ হওয়ায় Central Bureau for Astronomical Telegrams (CBAT) বিস্ময়কর M31 এবং M81 ছায়াপথে নোভা (Novae) চিহ্নিত করে । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথে প্রায় ৫৪টি Globular cluster সনাক্ত করা হয়েছে । তবে, স্তবকের প্রকৃত সংখ্যা ১২২ বা তারও বেশি হতে পারে । নিশ্চিত হওয়া স্তবকগুলো আকাশগঙ্গা ছায়াপথের Globular cluster এর চেয়ে কয়েক বিলিয়ন বছর তরুণ বা ছোট হতে পারে এবং স্তবক গঠন গত ১০০ মিলিয়ন বছরে বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে । এ বৃদ্ধি ছায়াপথের কেন্দ্রে গ্যাস প্রবাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত । ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথে বিশাল নক্ষত্রের অতিবেগুনী নিঃসরণ বা নির্গমন Large Magellanic Cloud এর অনুরূপ নক্ষত্রের স্তরের সাথে মিলিত । ধারণা করা হয়, ট্রায়াঙ্গুলাম ছায়াপথটি নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন এবং নক্ষত্রের বিভিন্ন প্রবাহ দ্বারা M31 ছায়াপথের সাথে যুক্ত, যা পরামর্শ দেয় যে এ দুটি ছায়াপথের মধ্যে একটি অতীত মিথস্ক্রিয়া ২ থেকে ৮ বিলিয়ন বছর আগে ঘটেছিল এবং ভবিষ্যতে ২.৫ বিলিয়ন বছর আরো সহিংস সংঘর্ষ ঘটবে ।


ছবি: @astrobackyard, Beyond The World
উৎস: উইকিপিডিয়া, Albert Einstein: Science & Astronomy ।

পহেলা বৈশাখ


চৈত্রের সমাপ্তি ।
বর্ষ বিদায় ।
সকল গ্লানি মিলিয়ে যাক দূর নীলিমায় ।
রুদ্র বৈশাখের আগমনী বার্তা ।
প্রত্যুষের সূর্যোদয় ।
শুভ বাংলা নববর্ষ!
পহেলা বৈশাখে আনন্দময় বর্ষ বরণ ।
হালখাতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তাভাত-ইলিশ, রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা ইত্যাদি ।
বৈশাখ বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব ।
বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক ।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহ্নিশিখা ।
অনুপ্রেরণার অপার উৎস ।
বৈশাখ শব্দের উৎপত্তি বিশাখা নক্ষত্র থেকে ।
বৈশাখ মাসে প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় রূপ ধারণ করে ।
কালবৈশাখীর হিংস্র তাণ্ডব ।
আমি শঙ্কিত ।
ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়ার নিদারুণ আর্তনাদ!
কানপেঁতে শুনি ।
কখনো কোকিলের মধুর কুহুতানে ভালোবাসার উচ্ছ্বাস ।
বৈশাখের পথ ধরে আগামীর স্বপ্ন দেখি ।

মহাকাশের সবচেয়ে প্রাচীনতম ও দূরবর্তী নক্ষত্র Earendel (WHL0137-LS)


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নৌ-পরিচালন ও মহাকাশ প্রশাসনের (NASA) হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে (Hubble Space Telescope বা HST) জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিস্ফোরণে মহাবিশ্বের জন্মের পর প্রথম বিলিয়ন বছর থেকে পরিচিত সবচেয়ে শক্তিশালী বিবর্ধিত ছায়াপথ WHL0137-zD1 এর মধ্যে বিদ্যমান একটি নক্ষত্রের আলো শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন । ছায়াপথটির ডাকনাম হচ্ছে Sunrise Arc । পৃথিবী থেকে অপার মহাবিশ্বের ঐ ছায়াপথে এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে দূরবর্তী নক্ষত্রটির নাম হচ্ছে WHL0137-LS ২০২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে নক্ষত্রটি আবিষ্কৃৃত হয় । এ অভূতপূর্ব আবিষ্কারের একটি গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে । বিজ্ঞানীরা নক্ষত্রটির ডাকনাম দিয়েছেন ইয়ারেণ্ডেল (Earendel), যেটি পুরোনো ইংরেজি নাম থেকে এসেছেইয়ারেণ্ডেল অর্থ হচ্ছে Morning star (ভোরের নক্ষত্র) বা Rising light (উদীয়মান আলো) । তাই নক্ষত্রটিকে ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্র বলা হয় । উল্লেখ্য যে: ইংরেজ লেখক এবং ফিলোলজিস্ট John Ronald Reuel Tolkien CBE FRSL এর একটি জনপ্রিয় বই হচ্ছে Eärendil । যেখানে পৌরাণিক কাহিনী সিলমারিলিয়নের (Silmarillion) একটি চরিত্রের নাম হচ্ছে Half-elven, যিনি একটি দীপ্তিময় রত্ন নিয়ে আকাশে ভ্রমণ করেছিলেন যেটি একটি নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল ছিল । চাঞ্চল্যকর এ নক্ষত্রের অন্যান্য নামগুলো হচ্ছে: WHL-J24.3324-8.477, WHL J013719.8-082841, PSZ1 G155.25-68.42, RM J013725.0-082722.7 । দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময় হচ্ছে মহাকাশের চতুর্মাত্রিক অবস্থান । এ বিশাল মহাবিশ্বে কোনো মহাজাগতিক বস্তুর টান অন্য আরেকটি মহাজাগতিক বস্তুর উপর বিদ্যমান থাকে । এটিই হচ্ছে অভিকর্ষ বল (Gravitational force), যা আলোর পথকে বেঁকে বা বক্র করে দেয়একটি বৃহৎ ছায়াপথ স্তবক WHL0137-08 এর মধ্যে স্বাগতিক WHL0137-zD1 বা Sunrise Arc ছায়াপথে বিদ্যমান দূরবর্তী বস্তুটিকে (নক্ষত্র) মহাকর্ষীয় অক্ষিকাচের (Gravitational lensing) প্রভাবের মাধ্যমে বড় করার কারণেই ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রটিকে দেখা সম্ভব হয়েছে । এ প্রক্রিয়াটি যখন ঘটে তখন নিকটবর্তী বস্তু দূরবর্তী বস্তুর জন্য একটি বিবর্ধক কাচের মতো কাজ করে । মাধ্যাকর্ষণের কারণে দূরবর্তী মহাকাশে পটভূমির ছায়াপথগুলোর আলোকে একটি দীর্ঘ অর্ধচন্দ্রাকারে বিকৃত করে বড় দেখায় । হস্তক্ষেপকারী WHL0137-08 ছায়াপথ স্তবকের মাধ্যাকর্ষণ ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রের আলোকে বেঁকে দেয় এবং এটিকে কমপক্ষে ৪০০০ গুণ (Factor) বিবর্ধিত করে । মানব সৃষ্ট অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রকৃতির সম্মিলিত শক্তির কারণেই নক্ষত্রটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে ।। মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের কারণে প্রাচীনতম এবং সৌরমণ্ডল থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রটি প্রায় ২৮ বিলিয়ন (৮.৬ বিলিয়ন পার্সেক বা ২ হাজার ৮০০ কোটি) আলোকবর্ষ দূরে Cetus নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত । বিস্ময়কর যে, এ অতি দূরবর্তী নক্ষত্রটি থেকে আমাদের কাছে আলো পৌঁছাতে প্রায় ১২৯০ কোটি বছর সময় লেগেছে । কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন (১৩৮০ কোটি) বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া প্রাচীন এক মহাপরমাণুর অতি শক্তিশালী মহাবিস্ফোরণের (Big Bang) প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বছর পর ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রটি গঠিত হয়েছিল । ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রটি ৬.২±০.১ লাল স্থানান্তর (Redshift) হওয়ার ফলে নক্ষত্র থেকে বর্তমানে আমরা যে আলো দেখতে পাচ্ছি সেটি ১২.৯ বিলিয়ন বছর (১২৯০ কোটি বছর) আগে ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্র থেকে তার যাত্রা শুরু করেছিল, অর্থাৎ মহাবিস্ফোরণের ১ বিলিয়ন বছরেরও কম (প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বছর পরে) সময় পর নক্ষত্রটি তার আলোকরশ্মি নির্গত করতে শুরু করেছিল । সুতরাং, ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রের যে আলো এ মুহূর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি তা ঐ নক্ষত্রটির বর্তমান অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে না । বিজ্ঞানীরা বলেন যে, সবচেয়ে প্রাচীন এ নক্ষত্রটি অনেক আগেই মরে গেছে এবং এখন আর এটির কোনো অস্তিত্ব নেই । মহাবিস্ফোরণের ফলে অসংখ্য নক্ষত্র, নাক্ষত্রিক অবশেষ, গ্রহ, গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু, আন্তঃগ্রহীয় ধূলি মেঘ, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, ধূলিকণা, মহাজাগতিক অদৃশ্য পদার্থ, নীহারিকা, সৌরজগৎ এবং ছায়াপথ ইত্যাদি নিয়ে মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল । মহাকালের পথ পরিক্রমায় এ অপার বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ছায়াপথগুলো পরস্পর থেকে ক্রমান্বয়ে নির্দিষ্ট গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে । যাই হোক, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ১৪.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ (৪.৪ বিলিয়ন পার্সেক) দূরবর্তী পূর্বের নথিভুক্ত আরো একটি আবিষ্কৃত নক্ষত্রের নাম হচ্ছে MACS J1149+2223 Lensed Star 1 । এ নক্ষত্রটি ইকারাস (Icarus) নামেও পরিচিত । অতি দৈত্যাকার (Supergiant) নীল নক্ষত্রটি উত্তর গোলার্ধের Leo নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এবং বিশাল ছায়াপথ স্তবকের মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা বিবর্ধিত হচ্ছে । মহাবিস্ফোরণের ৪.৪ বিলিয়ন বছর সময় পরে ইকারাস নক্ষত্রটি থেকে আলোকরশ্মি নির্গত হয়েছিল । জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নক্ষত্রটির লাল স্থানান্তর ১.৫ (Redshift 1.5) উল্লেখ করেছেন । কারণ, মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে দূরবর্তী বস্তুগুলো থেকে দীর্ঘতর আলো বিস্তৃত বা স্থানান্তরিত হয়, যখন এটি লালতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আমাদের দিকে ভ্রমণ করে । এছাড়া, জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র (James Webb Space Telescope বা Webb বা JWST) ব্যবহার করে একটি গবেষক দল সম্প্রতি মহাকর্ষীয় অক্ষিকাচযুক্ত একটি একক, অত্যন্ত বিবর্ধিত ও লাল দৈত্য কুইল্লুর (Quyllur) নক্ষত্রকে চিহ্নিত করে যেটি মহাবিস্ফোরণের প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর পর পর্যবেক্ষিত হয় । নক্ষত্রটি এতো দূরে যে এর আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে ১০.৭ বিলিয়ন বছর সময় নিয়েছে । এ নক্ষত্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩৫০০ কেলভিন এবং মহাবিশ্বের বয়স যখন ৩.১ বিলিয়ন বছর তখন তার অস্তিত্ব ছিল । কুইল্লুর নক্ষত্র হচ্ছে মহাজাগতিক দূরত্বে পাওয়া প্রথম লাল দৈত্য নক্ষত্র ।ইয়ারেণ্ডেলের মতো মহাজগতে এমন বিশাল দূরত্বের নক্ষত্রগুলোকে মহাকর্ষীয় অক্ষিকাচের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যা প্রায় ১০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে । এ কৌশলের মাধ্যমে মহাবিশ্বে সেই রকম কিছু নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, যেমন: পৃথিবী থেকে ১০.৯ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে Sunburst ছায়াপথের একটি পরিবর্তনশীল Godzilla নক্ষত্রকে (Redshift z = 2.37) । ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্র আবিষ্কার মহাবিশ্বের দূরবর্তী অতীতের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে এবং ছায়াপথসংক্রান্ত বিবর্তনের (Galactic evolution) প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিফলন ঘটায় । নাক্ষত্রিক পদার্থবিদ্যার জন্য এ আবিষ্কারগুলো মহাবিশ্বের একটি নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছে । বিজ্ঞানীদের জন্য এটি একটি নতুন বিষয়বস্তু যা প্রাথমিক মহাবিশ্ব সম্পর্কে অধ্যয়ন করছে । যেখানে একসময় ছায়াপথগুলো ছিল ক্ষুদ্রতম সনাক্তযোগ্য মহাজাগতিক বস্তু । ধারণা করা হয় যে, মহাবিস্ফোরণে তৈরি মহাবিশ্বের আদিম বা কাঁচা উপাদান হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দ্বারা গঠিত ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রটি প্রথম প্রজন্মের । এ নক্ষত্রটি যে পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছিল আমাদের সূর্যের মতো দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের নক্ষত্রগুলো ঐ সকল পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়নি ।জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উচ্চতর সংবেদনশীলতা ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রের বর্ণালী বিশ্লেষণে নক্ষত্রটি আসলে একটি একক নক্ষত্র কি-না এবং নক্ষত্রটিতে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের চেয়ে ভারী কোনো উপাদান আছে কি-না তা প্রকাশ করবে । দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির Near-Infrared Camera (NIRCam) পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে ইয়ারেণ্ডেল হচ্ছে একটি অতিকায় B-type নক্ষত্র, যা আমাদের সূর্যের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি উষ্ণ এবং প্রায় এক মিলিয়ন গুণ বেশি উজ্জ্বল । ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রটি তার চারপাশে শীতল ও লাল রঙের একটি সঙ্গী নক্ষত্রের ইঙ্গিতসহ আকর্ষণীয় বিবরণ প্রকাশ করে । যদি ইয়ারেণ্ডেল একটি একক নক্ষত্র হয়ে থাকে তবে তার তাপমাত্রা ১৩০০০ – ১৬৬০০০ কেলভিন (K) এবং বিবর্ধনের উপর নির্ভর করে এটির ৬৩১০০০ – ৩৯৮১০০০ সৌর দীপ্তি বা উজ্জ্বলতা (L☉) হবে । সম্ভবত ইয়ারেণ্ডেল একটি একক নক্ষত্র নাও হতে পারে, কারণ নক্ষত্রের বর্ণালী শক্তি বন্টন বা বিতরণে একটি শক্তিশালী Balmer বিরতি রয়েছে যা ১৩০০০ কেলভিনের নিচে তাপমাত্রা এবং একটি নীল অতিবেগুনি (Ultraviolet বা UV) ঢালের নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য যা ২০০০০ কেলভিনের উপর তাপমাত্রার নক্ষত্রে উপস্থিত থাকে । এটি সম্ভব যে ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্র হচ্ছে একটি বাইনারি (Binary), যার দুটি উপাদান রয়েছে যেখানে একটি অন্যটির (৯০০০ কেলভিন) চেয়ে বেশি উজ্জ্বল এবং অনেক বেশি গরম (৩৪০০০ কেলভিন) । সীমিত পরিমাণ তথ্যের কারণে পরিমাত্রাগুলো (Parameter) ভালোভাবে সীমাবদ্ধ নয় । যদি দুটি নক্ষত্র তন্ত্র বা ব্যবস্থায় থাকে তবে তাদের বিভিন্ন বিবর্ধন বা বিস্তৃতি থাকতে পারে, যা পরিমাত্রাগুলোকে আরো অনিশ্চিত করে তোলে । জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বর্তমানে Sunrise Arc Galaxy এবং ইয়ারেণ্ডেল নক্ষত্রকে জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের NIRSpec (Near-Infrared Spectrograph) ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ থেকে তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করছেন, যা ঐ ছায়াপথের জন্য সুনির্দিষ্ট রচনা এবং দূরত্ব পরিমাপ প্রদান করবে ।

তথ্যসূত্র: https://en.wikipedia.org/ , https://www.nasa.gov/ , https://hubblesite.org/

ছবি: https://webbtelescope.org/ , https://www.wikidata.org/

অলিম্পাস মন্স (Olympus Mons) সৌরজগতের সর্ববৃহৎ আগ্নেয়গিরি


সূর্য থেকে চতুর্থ দূরবর্তী গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল । এটি বুধ গ্রহের পরেই সৌরজগতের দ্বিতীয়-ক্ষুদ্রতম গ্রহ । রোমানদের রণদেবতা মার্স এর নামানুসারে মঙ্গল গ্রহের নামকরণ করা হয়েছে । পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার আঁতুড়ঘর মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাংশের প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার জনগণ মঙ্গল গ্রহকে যুদ্ধ, প্লেগ রোগ এবং মৃত্যু দেবতা নেরগাল (Nergal) এর মতো মনে করতেন । এছাড়া মঙ্গল গ্রহকে বাংলাসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় হিন্দু গ্রহদেবতা মঙ্গল হিসেবে গণ্য করতেন । ইতালীয় পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক গ্যালিলিও গ্যালিলি ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সর্বপ্রথম মঙ্গল গ্রহটি আবিষ্কার করেন । বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, এক সময় মঙ্গল গ্রহে পানির প্রাচুর্য ছিল । মঙ্গল গ্রহ শিলাময় । মঙ্গলের পৃষ্ঠ মূলত আগ্নেয়গিরিজাত শিলা (Basalt) এবং এর কেন্দ্রভাগ লৌহ-সালফার (Iron sulphide) দ্বারা গঠিত যা অনেকাংশে তরল ও চারদিকে Silicate দ্বারা ঘিরে আছে । মঙ্গল গ্রহে কোনো অভ্যন্তরীণ চৌম্বকক্ষেত্র নেই । এ গ্রহে চারটি ঋতু বিদ্যমান । মঙ্গল গ্রহের পাতলা বায়ুমণ্ডলে রয়েছে শতকরা ৯৫ ভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড, শতকরা ৩ ভাগ নাইট্রোজেন, শতকরা ১.৬ ভাগ আর্গন এবং বাকী অংশ অক্সিজেন ও পানি । হিমায়িত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বরফের কারণে মঙ্গল গ্রহের মেরু বরফাচ্ছাদিত । গ্রহটির পৃষ্ঠতলে Ferric oxide এর আধিক্যের কারণে এটি রক্তিম দেখায় । তাই মঙ্গল গ্রহটি ”লাল গ্রহ” (Red Planet) নামে পরিচিত । মঙ্গল গ্রহে রয়েছে সর্ববৃহৎ ও গভীর গিরিখাত Valles Marineris, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জ্বালামুখ Airi-0 এবং মহাসাগর Sinus Meridiani । কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নৌ-পরিচালন ও মহাকাশ প্রশাসন (NASA) এর Mars Perseverance Rover এক সময়কার একটি উত্তাল নদীর প্রমাণ পেয়েছে যেটি প্রাচীনকালে মঙ্গল গ্রহে প্রবাহিত হতো । মঙ্গল গ্রহের Phobos এবং Deimos নামক দুটি চাঁদ বা প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে । ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যোতির্বিজ্ঞানী Asaph Hall III মঙ্গল গ্রহের ক্ষুদ্রাকার এ চাঁদ দুটি আবিষ্কার করেন । পৃথিবীর পর মঙ্গলই হচ্ছে একমাত্র গ্রহ যেখানে পানির চিহ্ন এবং প্রাণের সম্ভাবনা রয়েছে । মঙ্গল গ্রহে বেশ কয়েকটি দৈত্যাকার আগ্নেয়গিরি রয়েছে । অলিম্পাস মন্স (Olympus Mons বা Mount Olympus Mons) শুধুমাত্র মঙ্গল গ্রহেরই নয়, এটি সৌরজগতের সর্ববৃহৎ-সর্বোচ্চ পর্বত এবং আগ্নেয়গিরি । এ পর্বতটির (পাহাড়ের মতো) শৃঙ্গ নেই কিন্তু এর রয়েছে অগ্ন্যুৎপাতের এক জ্বালামুখ, যেখান থেকে ভয়ঙ্কর অগ্ন্যুৎপাত হয় । চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে লাভা এবং ছাই । আগ্নেয়গিরি থেকে আগ্নেয়শিলা ছিটকে বেরিয়ে মহাজাগতিক রশ্মির সংস্পর্শে ধূমকেতুর রূপ নেয় । এ ধূমকেতুই মঙ্গল গ্রহ থেকে লাভা এবং আগ্নেয় পাথর বয়ে আনছে আমাদের সবুজ গ্রহ পৃথিবীতে । বিশাল ঢালু অলিম্পাস মন্স আগ্নেয়গিরিটি মঙ্গল গ্রহের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি অঞ্চল Tharsis Montes এর সাথে যুক্ত এবং এটি সর্বশেষ বিস্ফোরিত হয়েছিল প্রায় ২৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে । থার্সিস স্ফীতি (Tharsis Bulge) এলাকায় অবস্থিত প্রধান আগ্নেয়গিরিগুলো যেমন: Olympus Mons, Ascraeus Mons, Pavonis Mons এবং Arsia Mons ইত্যাদি । বৃহত্তম আগ্নেয়গিরিটি হচ্ছে অলিম্পাস মন্স । এদের মধ্যে কয়েকটি আগ্নেয়গিরি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিস্ফোরিত হয়নি । জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে দানব অলিম্পাস মন্স পর্বতটি অ্যালবেডো (Albedo) বৈশিষ্ট্যের কারণে Nix Olympica Mountain (Olympic Snow) বা অলিম্পাসের তুষার হিসেবে পরিচিত এবং এর আধুনিক নাম হচ্ছে অলিম্পাস মন্স (অলিম্পাস পর্বত) । NASA এর মেরিনার প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে Mariner 9 রোবোটিক মহাকাশযান মঙ্গল গ্রহে অনুসন্ধানের সময় এ পর্বতটি আবিস্কার করে । উল্লেখ্য যে: ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন LC-36B থেকে Mariner 9 মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের দিকে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং একই বছরের ১৪ই নভেম্বর এটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছেছিল যেটি প্রথম মহাকাশযান অন্য একটি গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে । Mars Orbiter Laser Altimeter (MOLA) দ্বারা পরিমাপ করা পর্বত তথাপি আগ্নেয়গিরিটির উচ্চতা ২১.৯ কিলোমিটার (১৩.৬ মাইল বা ৭২০০০ ফুট) এবং প্রশস্ত প্রায় ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মাইল) । পর্বতটি মঙ্গল গ্রহের পশ্চিম গোলার্ধে Tharsis স্ফীতির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে ১৮° ৩৯′ উত্তর ২২৬° ১২′ পূর্ব কেন্দ্রিক এবং এর পশ্চিম অংশ অ্যামাজোনিস চতুর্ভুজ (MC-8) ও কেন্দ্রীয়-পূর্ব অংশ সংলগ্ন Tharsis চতুর্ভুজে (MC-9) রয়েছে । অলিম্পাস মন্স পর্বতের ১৫.৬ কিলোমিটার ব্যাসের (৯.৭ মাইল) একটি কার্জোক অগ্নিমুখ বা গর্ত (Karzok crater) (১৮° ২৫′ উত্তর ২২৮° ০৫′ পূর্ব) এবং ১০.৪ কিলোমিটার ব্যাসের (৬.৫ মাইল) অপর একটি পাংবোচে অগ্নিমুখ বা গর্ত (Pangboche crater) (১৭° ১০′ উত্তর ২২৬° ২৫′ পূর্ব) রয়েছে । এগুলো মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ডের সবচেয়ে প্রাচুর্য শ্রেণী Shergottite এর বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক উৎস এলাকা হিসেবে উল্লেখযোগ্য । পর্বতটি এতোই বড় যে তার প্রান্তে জটিল কাঠামো থাকার কারণে এর উচ্চতা পরিমাপ করা খুবই কঠিন । অলিম্পাস মন্স মঙ্গল গ্রহের Global datum থেকে ২১ কিলোমিটার (১৩ মাইল) উপরে দাঁড়িয়ে আছে যা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের শিখর পর্যন্ত । Amazonis Planitia এর সমভূমি থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১০০০ কিলোমিটার (৬২০ মাইল) এবং চূড়া পর্যন্ত মোট উচ্চতার পরিবর্তন ২৬ কিলোমিটার (১৬ মাইল) । পর্বতের চূড়ায় ছয়টি বিশাল আকৃতির আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা ধ্বসিত গর্ত (Nested caldera) রয়েছে যা ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) × ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) জুড়ে এবং ৩.২ কিলোমিটার (২.০ মাইল) গভীর পর্যন্ত একটি অনিয়মিত নিম্নচাপ তৈরি করে । পর্বত বা আগ্নেয়গিরির বাইরের প্রান্তটি ৮ কিলোমিটার (৫.০ মাইল) লম্বা এক দুরারোহ পর্বতগাত্র (Escarpment) নিয়ে গঠিত (যদিও অস্পষ্ট যে ঐ স্থানে লাভা প্রবাহ হয়) । এ আগ্নেয়গিরি থেকে গড়িয়ে পড়া লাভা অনেক দূরে প্রবাহিত হওয়ার কারণে পাহাড়ের নিচের অংশটি চারপাশে বহুদূর পর্যন্ত দিগন্ত বিস্তৃত এক বিশাল সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে । আগ্নেয়গিরির আশপাশের কোনো কোনো জমিতে অনেকাংশ জুড়ে অসংখ্য অদ্ভুত ভাঁজ সৃষ্টি করেছে । মঙ্গলের ঢালু আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে এটি একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য যা বিশাল পার্শ্ববর্তী ভূমিধসের কারণে তৈরি হয়ে থাকতে পারে । মঙ্গল গ্রহের ভূত্বক (Crust) পৃথিবীর মতো সচল নয় । পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গল গ্রহের ভূত্বক একটি স্থির বা নিশ্চল হটস্পটের (Stationary hotspot) উপর স্থির থাকে এবং ভূত্বকীয় ফলক (Plate) যখন হটস্পটের উপর দিয়ে চলাচল করে তখন নতুন নতুন আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি হয়ে পুরোনো আগ্নেয়গিরিগুলো বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হয় । সম্ভবত মঙ্গল গ্রহে মোবাইল টেকটোনিক প্লেটের (Mobile tectonic plates) অভাবের কারণে ভূত্বক স্থির থাকে । গ্রহটির ভূত্বক বা উপরিতলের একই জায়গাতে গলিত শিলা বা ম্যাগমা পর্যায়ক্রমে নিঃসরণ করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে এ সঞ্চিত লাভা থেকেই জন্ম নেয় এক একটি সুবিশাল আগ্নেয়গিরি । একটি আগ্নেয়গিরি বিশাল উচ্চতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত লাভা নির্গত করতে পারে । হয়তো, এ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের কারণেই অলিম্পাস মন্স পর্বতের এমন অসাধারণ আকৃতি । বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, কোটি কোটি বছর আগে অলিম্পাস মন্স আগ্নেয়গিরির অতিরিক্ত তাপমাত্রায় উত্তপ্ত লাভার গরমে এক সময় মঙ্গল গ্রহে বরফের যে স্তর ছিল তার একটি অংশ গলে গিয়ে ভূমিধ্বস সৃষ্টি করে । অলিম্পাস মন্স পর্বতের আকার এবং অগভীর ঢালের কারণে মঙ্গল পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পর্যবেক্ষক এটির সম্পূর্ণ পার্শ্বচিত্র বা নকশা দেখতে অক্ষম হবেন, এমনকি অনেক দূর থেকেও । মঙ্গল গ্রহের বক্রতা এবং পর্বতটি নিজেই এমন একটি সংক্ষিপ্ত দৃশ্যকে অস্পষ্ট করবে । একইভাবে, চূড়ার কাছাকাছি একজন পর্যবেক্ষক খুব উঁচু পাহাড়ে দাঁড়ানোর বিষয়ে অজ্ঞাত থাকবেন, কারণ পর্বতের ঢাল দিগন্তের বাইরে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে প্রসারিত হবে । অলিম্পাস মন্স পর্বত শীর্ষে সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হচ্ছে ৭২ প্যাসকেল, যেখানে গড়ে মঙ্গল পৃষ্ঠের চাপ ৬০০ প্যাসকেলের শতকরা প্রায় ১২ ভাগ । অপরদিকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এভারেস্ট পর্বত (Mount Everest) চূড়ায় যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ প্রায় ৩২০০০ প্যাসকেল বা পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের চাপের শতকরা প্রায় ৩২ ভাগ । তা সত্ত্বেও, উচ্চ-ঊর্ধ্বতায় অরোগ্রাফিক মেঘগুলো (Orographic clouds) প্রায়শই অলিম্পাস মন্স শিখর বা সর্বোচ্চ সীমার (Olympus Mons summit) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং বায়ুবাহিত মঙ্গল ধূলিকণা এখনো বিদ্যমান । যদিও গড়ে মঙ্গল পৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর এক শতাংশেরও কম । মঙ্গলে অনেক কম মাধ্যাকর্ষণের কারণে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধি পায় । মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিস্তৃত এবং পৃথিবীর মতো তীব্রভাবে উচ্চতার সাথে ঘনত্বে নেমে আসে না ।

অলিম্পাস মন্স পর্বতটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট পর্বতের উচ্চতার প্রায় আড়াই গুণ । এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীন হাওয়াই দ্বীপের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা কেয়ার (Mauna Kea) সমুদ্র তলদেশের ভিত্তি থেকে এর উচ্চতার দ্বিগুণের একটু বেশি । তবে ধারণা করা হয়, বৃহত্তম গ্রহাণু ভেস্তা এর পৃষ্ঠে Rheasilvia নামক এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও প্রভাবশালী গর্ত রয়েছে যেটি অলিম্পাস মন্স পর্বতের চেয়েও উঁচু এবং বর্তমানে সৌরজগতে আবিষ্কৃত সবচেয়ে উচ্চ পর্বত । এছাড়া আলবা মন্স (Alba Mons বা Alba Patera বা Arcadia Ring নামেও পরিচিত) হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের উত্তর Tharsis অঞ্চলে অবস্থিত সর্ববৃহৎ আগ্নেয়গিরি যেটি অলিম্পাস মন্স পর্বতের উচ্চতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ । আলবা মন্স এমন একটি অনন্য আগ্নেয়গিরির কাঠামো যার কোনো সমকক্ষ পৃথিবীতে বা মঙ্গল গ্রহের অন্য কোথাও নেই । যাই হোক, অলিম্পাস মন্স পর্বতটি মঙ্গল গ্রহের হেস্পেরিয়ান যুগে (Hesperian epoch) (৩.৫ বিলিয়ন বছর থেকে ১.৮ বিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত) গঠিত হয়েছিল এবং আমাজনীয় অঞ্চলে অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত ছিল । অলিম্পাস মন্সের আয়তন প্রায় ৩০০০০০ বর্গ কিলোমিটার (১২০০০০ বর্গ মাইল) যেটি ইতালি, ফিলিপাইন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনার মতোই এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত । এ পর্বতটি ৭০ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) পুরু লিথোস্ফিয়ার (Lithosphere) দ্বারা সমর্থিত এবং এর গঠন শতকরা প্রায় ৪৪ ভাগ সিলিকেট, শতকরা ১৭.৫ ভাগ আয়রন অক্সাইড, শতকরা ৭ ভাগ অ্যালুমিনিয়াম, শতকরা ৭ ভাগ সালফার ডাই অক্সাইড, শতকরা ৬ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম এবং শতকরা ৬ ভাগ ক্যালসিয়াম । যেহেতু, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠটি মূলত ব্যাসাল্ট (Basalt) এবং অন্যান্য ম্যাফিক (Mafic) শিলা দ্বারা গঠিত হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে বা নিম্ন সান্দ্রতা লাভা (Viscosity lava) প্রবাহের ফলে সবেগে উৎক্ষিপ্ত বা বিস্ফোরিত হতে পারে এবং গ্রহের পৃষ্ঠ নিম্ন নতিমাত্রার দিকে নিয়ে যাবে । অলিম্পাস মন্স আগ্নেয়গিরিতে সঞ্চিত লাভার পরিমাণ পৃথিবীর বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়া (Mauna Loa) থেকেও প্রায় ১০০ গুণ বেশি । অলিম্পাস মন্স আংশিকভাবে Olympus Mons Aureole নামে পরিচিত স্বতন্ত্র খাঁজকাটা বা ঢেউতোলা ভূখণ্ডের একটি অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত । এ অঞ্চলটি (Aureole) কয়েকটি বড় Lobe নিয়ে গঠিত ।

পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গল গ্রহে মাধ্যাকর্ষণ হ্রাসের কারণে ভূত্বক থেকে উঠে আসা ম্যাগমা’র উচ্ছলতা কম এবং ম্যাগমা কক্ষগুলোকে পৃথিবীতে পাওয়া কক্ষ বা প্রকোষ্ঠগুলোর চেয়ে অনেক বড় ও গভীর বলে মনে করা হয় । অলিম্পাস মন্স পর্বতের পার্শ্বদেশগুলো (Flank) অসংখ্য লাভা প্রবাহ এবং নালা দ্বারা গঠিত । অনেক প্রবাহের প্রান্ত বরাবর উঁচু পাড় বা বাঁধ বা স্তর রয়েছে । বাইরের প্রান্তগুলো গলিত প্রবাহিত লাভার একটি কেন্দ্রীয় খাদ ছেড়ে শীতল এবং শক্ত হয়ে যায় । অলিম্পাস মন্সের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে লাভা প্রবাহের বয়স ১১৫ মিলিয়ন বছর (Mya) থেকে মাত্র ২ মিলিয়ন বছর (Mya) পর্যন্ত । ধারণা করা হয়, পর্বত অঞ্চলে এখনো আগ্নেয়গিরি সক্রিয় থাকতে পারে যদিও খুব শান্ত এবং অনিয়মিত চলন বা প্রথায় (Episodic fashion) । বিশাল আকৃতির এ পর্বত বা আগ্নেয়গিরির শিখরে থাকা যৌগিক বা দুর্বোধ্য জ্বালামুখটি (Caldera complex) কমপক্ষে ছয়টি অধিক্রমণ জ্বালামুখ এবং জ্বালামুখের অংশ দিয়ে তৈরি । আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর ভূপৃষ্ঠের ম্যাগমা প্রকোষ্ঠের অবক্ষয় এবং প্রত্যাহারের পর ছাদ ধসে পড়ে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ তৈরি হয় । এভাবে প্রতিটি বৃহদাকার জ্বালামুখ পাহাড়ে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের একটি পৃথক স্পন্দনকে প্রতিনিধিত্ব করে । তাই, সবচেয়ে বৃহৎ এবং প্রাচীনতম এ জ্বালামুখ অংশটি একটি একক ও বৃহত্তম লাভা হ্রদ হিসেবে গঠিত বলে মনে হয় । বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, অলিম্পাস মন্স পর্বতের বিশাল জ্বালামুখের সাথে যুক্ত ম্যাগমা প্রকোষ্ঠটি জ্বালামুখের তল থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (১০৫০০০ ফুট) গভীরতায় অবস্থিত । জ্বালামুখের মেঝেতে গর্তের আকার কম্পাঙ্ক বা স্পন্দনহারের বিতরণ (Crater size-frequency distribution) প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বছর (Mya) থেকে ১৫০ মিলিয়ন বছর (Mya) পর্যন্ত জ্বালামুখের বয়সের পরিসীমা নির্দেশ করে । সবগুলো জ্বালামুখই সম্ভবত একে অপরের ১০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে গঠিত হয়েছিল । অলিম্পাস মন্স পর্বতটি গাঠনিক ও ভূসংস্থানিকভাবে অপ্রতিসম এবং এটি মঙ্গল গ্রহের অন্যতম ধুলোময় অঞ্চলে দাঁড়িয়ে আছে ।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল (The Internet) । ছবি: https://www.wikiwand.com/

উল্কা (Meteoroid)


আমি মহাবিশ্বের এক বিস্ময়কর উল্কা ।
পাথুরে-ধাতব বস্তু যেটি গ্রহাণু ও ধূমকেতুর চূর্ণবিচূর্ণ অংশবিশেষ ।
কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে দুর্বার গতিতে ঝাঁক বেঁধে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হই ।
বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় বাতাসে ঘর্ষণ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জ্বলে উঠি ।
নিজস্ব প্রভাব এবং উত্তাপের কারণে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা সৃষ্টি করি ।
তখন কেউ আমাকে বলে নক্ষত্র-খসা বা ছুটন্ত তারা বা উল্কাপাত ।
বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভেঙে প্রজ্জ্বলিত হওয়াকে কেউ বলে উল্কা বৃষ্টি বা উল্কা ঝড় ।
পৃথিবী, ধূমকেতু এবং অন্যান্য উৎসের সাথে সংঘর্ষ বা বিস্ফোরণে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ স্রোতকে কেউ বলে উল্কা ঝরনা ।
আবার কেউ বলে আকাশের সন্তান ।
একসময় আকাশেই জ্বলে ছাই হয়ে যাই ।
কদাচিৎ পিণ্ড আকারে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ি ।
আমাকে নিয়ে অনেক কুসংস্কার, ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রাচীন লোককথা এবং পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে ।
সৌরজগৎ গঠনের পূর্বে বা প্রাথমিক সময়ে আমার জন্ম ।
হয়তো কোনো মহাবিস্ফোরণে ।
তবে কি আমি ভ্রুণগ্রহীয় চাকতি বা ধ্বংস হওয়া গ্রহের অবশিষ্টাংশ?
৪৬০ কোটি বছর পূর্বে নীহারিকা বিস্ফোরণ থেকে এক দানবীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক আণবিক মেঘের মহাকর্ষীয় পতনের ফলে সৌরজগতের উৎপত্তি ।
আমার আদি পূর্বপুরুষ সৌরজগৎ সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান বহন করে ।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ছায়াপথে অন্ধকারে নিমগ্ন জমাটবাঁধা ঠাণ্ডা নীহারিকার হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, প্লাসমা, বস্তুপুঞ্জ এবং ধূলিকণা মেঘের কিছু উপাদান মহাকর্ষের প্রবল টানে কেন্দ্রে ঘনীভূত হয়ে কেন্দ্রিকা (Nucleus) তৈরি করে নক্ষত্রের জন্ম হয় ।
কোটি কোটি বছর ধরে জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষ হয়ে নক্ষত্রটির অভ্যন্তরভাগে প্রচণ্ড অন্তস্ফোটন (Implosion) বা অতিনবতারা বিস্ফোরণের (Supernova) মধ্য দিয়ে একসময় মৃত্যু ঘটে ।
অতিনবতারা মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আলোক বিচ্ছুরনকারী বিস্ফোরণ এবং মহাকাশে দানবীয় নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত নক্ষত্রটি পুরো ছায়াপথের চেয়েও সর্বাধিক উজ্জ্বল হয়ে প্রচুর পরিমাণে শক্তি, তীব্র আলোক বিকিরণ, ধ্বংসাবশেষ, ভারী মৌল কণা, P-nucleus isotope, অতি উচ্চশক্তির মহাজাগতিক তেজস্ক্রিয় রশ্মি, গ্যাস-ধূলিকণা মেঘ সৃষ্টি করে পুনর্জন্ম দেয় একটি নতুন প্রজন্মের নক্ষত্র, নিউট্রন নক্ষত্র, পালসার নক্ষত্র, গ্রহ, শীতল নীহারিকা, কৃষ্ণগহ্বর ও আমাকে ।
কোনো এক সময় জটিল প্রক্রিয়ার মাঝে একটি নক্ষত্রের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করি ।
কিংবা কোনো দানব গ্রহকে ঘিরে ।
আমি প্রাণ-অস্তিত্বের প্রাচীনতম কঠিন পাথর বা মহাজাগতিক বস্তু বা সৌরজাগতিক বস্তু ।
অঙ্গারময়, শিলা (কাদামাটি, সিলিকেট শিলা, নিকেল ও লোহা), কন্ড্রুল এবং ধাতু সমৃদ্ধ ।
আমার আদি পিতৃপুরুষের উপাদান সিলিকন কার্বাইড (কার্বোরান্ডাম) কণার বয়স প্রায় ৭০০ কোটি বছর ।
যেখানে পৃথিবীর বয়স ৪৫৪ কোটি বছর অতিক্রম করেছে ।
এমনকি সৌরজগতের বয়সের চেয়েও বেশি ।
আমার পিতৃপিতামহগণ এ পৃথিবীতে পতনের ফলে প্রাণের উদ্ভবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ।
কমলা-হলুদ, হলুদ, নীলচে-সবুজ, বেগুনী, কালো এবং লাল রঙ ধারণ করে মহাজাগতিক সৌন্দর্য প্রকাশ করি ।
গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও ধূমকেতুর কণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মহাকাশে ধেয়ে যাই তীব্র গতিতে দোর্দণ্ড প্রতাপে ।
কখোনো গ্রহ, মহাজাগতিক বস্তু এবং স্ব-জাতির সাথে আকস্মিক সংঘর্ষ ঘটে ।
ডেকে আনি ভয়ঙ্কর মহাবিপর্যয় ।
নক্ষত্র, গ্রহাণু, ধূমকেতু ছাড়াও সম্ভবত অন্য কোনো গ্রহ-উপগ্রহ থেকে উদ্ভূত হয়ে পৃথিবীতে এসে সেই গ্রহের গঠন, উৎপত্তি, বিবর্তন এবং জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিচিত্র ইঙ্গিত প্রদান করি ।
আদিম বৃহৎ গ্রহের ভ্রূণ Theia এর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী ভেঙ্গে তার টুকরো থেকেই সৃষ্টি হয় চাঁদ ।
প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে আমার বিধ্বংসী আঘাতে ডাইনোসর জাতি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
তবে কেউ কেউ বলেন সেই মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তন ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে এটি ঘটেছিল ।
সুতরাং আমি আজ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন ।
অষ্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মার্চিসন গ্রামে ২৮শে সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মার্চিসন উল্কাপিণ্ডের (Murchison meteorite) খণ্ডাংশ পতিত হয় ।
সৌরজগৎ গঠনের প্রাথমিক সময়ে তার আবির্ভাব ।
এ গ্রহের মানুষ দেখেছে ভয়াবহ ধ্বংসলীলার ভীবৎস রূপ ।
কখোনো আমাকে গ্রহাণু বা ক্ষুদ্র বামন গ্রহও বলা হয় ।
আমি পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ানক শক্তিশালী এবং বৃহদাকার জ্বালামুখ বা গর্ত, অগ্নিকাণ্ড, উচ্চ তাপমাত্রা, ধূলিঝড় ও প্রবল অভিঘাত-তরঙ্গের সৃষ্টি করি ।
সমস্ত ধ্বংসাবশেষ বায়ুমণ্ডলে প্রেরণ করে সূর্যরশ্মিকে গ্রহে আসতে বাঁধা দেই এবং সম্পূর্ণ গ্রহে এর প্রভাব ফেলি ।
সৌরজগতে অগণিত গ্রহাণুর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম 2001 KX76 গ্রহাণুটি ছাড়াও আরো কয়েকটি গ্রহাণু হচ্ছে সেরেস, ভেস্টা, প্যালাস, হাইজিয়া, ডেভিডা এবং ট্রোজান ।
গ্রহাণু বলয়ের একমাত্র বামন গ্রহ বা সেরেস ফার্দিনান্দিয়া গ্রহাণুটি গ্রহাণুপুঞ্জ বলয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে ।
কয়েকটি প্রকাণ্ড গ্রহাণুর চাঁদ রয়েছে ।
যদি কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়া ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী বিশাল কোনো গ্রহাণু, মহাজাগতিক বস্তু ও আমার আগ্রাসী আঘাতে কিংবা সৌরজগতের সর্ববৃহৎ গ্যাসীয় দৈত্য বৃহস্পতি গ্রহের মহাকর্ষ বলের ক্ষিপ্র প্রভাবে পৃথিবী কক্ষচ্যুত হয়ে পড়ে তবে এর পরিণতি কি হবে ।
মানবজাতি টিকবে তো?
হয়তো আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় পৃথিবীমুখী আসন্ন দৈত্যাকার গ্রহাণু বা আমার গতিপথকে পরিবর্তন করা যেতে পারে ।
তবুও পৃথিবীবাসী শঙ্কিত!
শেষ রক্ষা হবে কি?
কারণ, আমি চরম নৃশংস ও বিনাশী ।

ছবি: https://inews.zoombangla.com/  ।

  • তথ্যসূত্র: অন্তর্জাল (The Internet) ।

“বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে লেগুম উদ্ভিদ”


লেগুম উদ্ভিদ তথাপি শিমজাতীয় গাছ হচ্ছে Fabaceae (বা Leguminosae) পরিবারের একটি উদ্ভিদ অথবা এ জাতীয় উদ্ভিদের ফল বা বীজ । এর বীজ বা শুকনো দানাকে ডাল বলা হয় । সাধারণত বীজের জন্য লেগুম চাষ করা হয় । লেগুম গাছ উদ্ভিদগতভাবে অনন্য ধরণের ফল উৎপন্ন করে । প্রাথমিকভাবে মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য, শিল্পে ব্যবহারের জন্য তেল উৎপাদন, সাইলেজ বা পুষ্টিকর গো-খাদ্যের জন্য সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করার পদ্ধতিতে এবং মাটি-বর্ধক সবুজ সার হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয় । সুপরিচিত লেগুমের মধ্যে রয়েছে মটরশুটি, সয়াবিন, ছোলা, চিনাবাদাম, মসুর ডাল, Lupine বা Chochos, ঘাস মটর, Mesquite, Carob, তেঁতুল, Alfalfa এবং Clover ইত্যাদি । এ শস্যগুলো প্রচুর পুষ্টিমান সমৃদ্ধ, যা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্যের অংশ এবং এর বিশাল অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে । এতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, তন্তু, খনিজ, ভিটামিন, প্রোটিন এবং শর্করার উচ্চ সামগ্রী রয়েছে । লেগুম নিরামিষাশী মাংস (Vegan meat) এবং দুগ্ধ বিকল্পের একটি মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় । এছাড়া এগুলো প্রতিরোধী শ্বেতসারের (Starch) একটি চমৎকার উৎস । বিশ্ব বাজারে একটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন উৎস হিসেবে এর ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । এ উদ্ভিদের বীজ বা শুকনো ফলগুলো ফুলের সবচেয়ে ভিতরের ঘূর্ণি Gynoecium থেকে গঠিত হয়, যা একটি একক গর্ভপত্র (Carpel) থেকে Ventral suture ও পৃষ্ঠীয় স্নায়ুর (Dorsal nerve) মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করে এবং সাধারণত দুই পাশে ফাটিয়া যায় (দুই প্রান্তের জোড় বরাবর খোলে) । লেগুম উদ্ভিদ উল্লেখযোগ্য যে, তাদের বেশিরভাগের গঠনে Symbiotic nitrogen-fixing bacteria রয়েছে যাকে Root nodule বলা হয় । যে কারণে, তারা ফসল ঘূর্ণনে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে । বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মানব সভ্যতার জন্য এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে যার ফলে ব্যাপক বিরূপ পরিণতির কারণে ফসলের ফলন হ্রাস এবং বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে । শস্য উদ্ভিদের মধ্যে লেগুম উদ্ভিদ বিশ্বে উষ্ণতা কমানোর জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে কারণ এটি রাসায়নিক সার প্রয়োগের উপর নির্ভরতা কমিয়ে মাটিতে Nitrification এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ঘটিত কার্বন বন্দীকরণকে (Carbon sequestration) বৃদ্ধি করে মানুষ ও গবাদি পশু উভয়ের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারে । উল্লেখ্য: Nitrification হচ্ছে গ্যাসীয় নাইট্রোজেন থেকে নাইট্রিক এসিড তৈরির প্রক্রিয়া । সাধারণত বজ্রপাতের পর বাতাসের হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন একত্রিত হয়ে মাটিতে নাইট্রিক এসিড জমা হয় এবং পরবর্তীতে মাটিস্থ পানির সাথে মিলে তৈরি হয় নাইট্রিক এসিড । অথবা, যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন অণুজীব মাটিতে অবস্থিত বর্ণহীন, ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত এবং খুব শক্তিশালী অ্যামোনিয়া গ্যাসকে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট যৌগে রূপান্তরিত করে ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ হলের সম্মানিত প্রাধ্যক্ষ মোঃ জাবেদ হোসেন, হোসেন মোঃ আনোয়ার এবং CSIR-CSMCRI Bhavnagar ও প্রধান বিজ্ঞানী ডু্ঙ্গার আর চৌধুরী সম্পাদিত ও CRC press (Taylor & Francis Group, UK) কর্তৃক প্রকাশিত “Climate Change and Legumes – Stress Mitigation for Sustainability and Food Security” (”জলবায়ু পরিবর্তন এবং লেগুম উদ্ভিদ – স্থায়িত্ব ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চাপ প্রশমন”) বইটি জলবায়ু-সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর উপর সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল ও পর্যালোচনা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য শিমজাতীয় গাছের সম্ভাবনা, কৃষি জমির উন্নত ব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং টেকসই কৃষি অনুশীলনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে । বিজ্ঞানী, কৃষি অনুশীলনকারী এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এ বইটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে যারা কৃষি সম্বন্ধে খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু-প্ররোচিত চাপের আরো ভালো ব্যবস্থাপনা অর্জনের জন্য কাজ করছেন । বইটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় স্তরের শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের জন্য একটি Reference বই হিসেবেও কার্যকর হবে । উপরন্তু, ফলন ও শিমজাতীয় গাছের কঠিন চাপ সহনশীলতার পাশাপাশি জলবায়ু-স্মার্ট শস্যের উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং একটি টেকসই পরিবেশের জন্য ফসল ব্যবস্থার উন্নতি সম্পর্কে এ বইটি বর্ধিত বা উন্নত জ্ঞান প্রদান করবে ।

বইটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:

(ক) বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবণতা এবং মহাদেশ জুড়ে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এর পরিণতি পর্যালোচনা করে ।

(খ) বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে শিমজাতীয় গাছ চাষের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ চিহ্নিত করে ।

(গ) Omics-ভিত্তিক প্রজনন, জৈবপ্রযুক্তি, জীনতত্ত্ব প্রকৌশল ও রাইজোবিয়াম প্রযুক্তিসহ কৃষি পদ্ধতি এবং আধুনিক কৌশলগুলোতে সংরক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে শিমজাতীয় গাছ উৎপাদনের উন্নতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ।

(ঘ) জলবায়ু-প্ররোচিত চাপ দ্বারা প্রভাবিত মৃত্তিকার জন্য টেকসই উন্নতির বিকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করে ।

(ঙ) Greenhouse gas নির্গমন কমাতে রাইজোবিয়াম প্রযুক্তির প্রয়োগ ।

(চ) ফলন, প্রতিরোধ এবং জলবায়ু-প্ররোচিত চাপের প্রতি শিমজাতীয় গাছের সহনশীলতার সাথে সম্পর্কিত পথগুলো বর্ণনা করে ।

উল্লেখ্য: জীববিজ্ঞানে Omics শব্দটি একটি কোষের মধ্যে থাকা উপাদানগুলোর সমষ্টিকে বোঝায় । Omics হচ্ছে জৈবপ্রযুক্তির একটি অংশ যা আণবিক জিন স্তর (Genomics), প্রোটিন স্তর (Proteomics) এবং বিপাকীয় স্তরসহ (Metabolomics) বিভিন্ন স্তরে একটি প্রদত্ত জৈবিক ক্রিয়ার (Function) পুরো বিন্যাস বা সাজসজ্জার গঠন এবং কার্যাবলী বিশ্লেষণ করে । ওমিক্স বিজ্ঞানে (Omics Sciences) কোষ-কলাগুলোর গঠন ও কার্যকারিতায় অবদান রাখে এমন জৈব অণু ও আণবিক প্রক্রিয়াগুলো সনাক্তকরণ, বর্ণনা এবং পরিমাপ করার মূল লক্ষ্য ভাগ করে নেয় । Omics এর লক্ষ্য হচ্ছে জৈবিক অণুর একত্রীভবন বা গভীর অংশগুলোর সমষ্টিগত বৈশিষ্ট্য এবং পরিমাণ নির্ধারণ করা যা একটি জীব বা জীবের গঠন, কার্যকারিতা এবং গতিশীলতায় অনুবাদ করে । কার্যকরী জিনোমিক্সের লক্ষ্য হচ্ছে একটি প্রদত্ত জীবের যতোটা সম্ভব জিনের কার্যকারিতা সনাক্ত করা । এটি Saturated mutant সংগ্রহের সাথে Transcriptomics এবং Proteomics এর মতো বিভিন্ন Omics কৌশলকে একত্রিত করে । জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন: Genomics, Proteomics, Metabolomics, Metagenomics, Phenomics এবং Transcriptomics ।

তথ্যসূত্র: https://www.routledge.com/ , উইকিপিডিয়া ।

https://www.routledge.com/Climate-Change-and-Legumes-Stress-Mitigation-for-Sustainability-and-Food/Zabed-Hossain-Md-Anawar-Chaudhary/p/book/9781032079844#

https://blackwells.co.uk/bookshop/product/Climate-Change-and-Legumes-by-Mohammad-Zabed-Hossain-editor-Hossain-Md-Anawar-editor-Doongar-R-Chaudhary-editor/9781032079844

https://www.barnesandnoble.com/w/climate-change-and-legumes-mohammad-zabed-hossain/1142611995

https://www.indigo.ca/en-ca/climate-change-and-legumes-stress-mitigation-for-sustainability-and-food-security/9781032079844.html

https://www.vitalsource.com/products/climate-change-and-legumes-v9781000866568

উজ্জ্বল নক্ষত্র HD 110067 কে ছয়টি গ্রহ অনুরণনে প্রদক্ষিণ করছে


জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আকাশগঙ্গা ছায়াপথে (The Milky Way Galaxy) নতুন একটি সৌরজগতের সন্ধান পেয়েছেন । তারা বিশ্বাস করেন যে, এ সৌরজগতটি কোটি কোটি বছর আগে তার জন্মের পর থেকে অস্পর্শ ছিল । বিশাল মহাবিশ্বে জন্ম নেয়া আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭০০০ আলোকবর্ষ দূরে ছায়াপথের এক অতি ক্ষুদ্র অংশে কালপুরুষ বাহুতে একাধিক গ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের সৌরজগৎ (Solar System), যার কেন্দ্রে রয়েছে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড সূর্য । সেই সৌরজগতের একটি ছোট সবুজ গ্রহ পৃথিবী হচ্ছে আমাদের বাসস্থান । অসংখ্য নক্ষত্র, নাক্ষত্রিক অবশেষ, গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু, আন্তঃগ্রহীয় ধূলি মেঘ, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, ধূলিকণা, অদৃশ্য পদার্থ, নীহারিকা, সৌরজগৎ এবং মহাজাগতিক বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত হয় এক একটি ছায়াপথ । অর্থাৎ আমরা থাকি আকাশগঙ্গা ছায়াপথে । আকাশগঙ্গা ছায়াপথের সবচেয়ে নিকটবর্তী বামন ছায়াপথ হচ্ছে Canis Major Dwarf Galaxy (Canis Major Overdensity) যা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের Galactic Core কে কেন্দ্র করে মহাকর্ষ শক্তি দ্বারা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের সাথে আবদ্ধ আছে । আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রে বেতার তরঙ্গের প্রবল উৎস এবং ধনু এ তারা (Sagittarius A*) নামক অতিভার বিশিষ্ট একটি কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে । আর এ আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই আবিষ্কৃত হয়েছে আরো একটি নতুন সৌরজগৎ ৷ দারুণ ও বিস্ময়কর ঘটনা! ঐ সৌরজগতে সবচেয়ে উজ্জ্বল একটি বামন নক্ষত্র HD 110067 কে কেন্দ্র করে নিখুঁত সুরে ঘুরছে ০৬টি গ্রহ । যে নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা আলোকীয় তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিখ্যাত লাল বামন TRAPPIST-1 নক্ষত্রকে প্রায় ১০০০০ গুণ ছাড়িয়ে গেছে । গ্রহগুলো একটি নির্দিষ্ট ছন্দে বা অনুরণিত শৃঙ্খলে অনেকটা গাণিতিকভাবে কেন্দ্রীয় নক্ষত্র HD 110067 কে কেন্দ্র করে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে । জ্যামিতিক ছন্দে নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহগুলোর আবর্তনের এ ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা ‘কাক্ষিক অনুরণন’ (Orbital Resonance) নামে আখ্যায়িত করেছেন । জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এটি এমন একটি আপেক্ষিক অবস্থান বা বহিরবয়ব বা রূপরেখা (Configuration), যা প্রকৃতিতে পর্যবেক্ষণ করা একটি বিরল ঘটনা । সত্যিই, অনন্য আবিষ্কার । উত্তর গোলার্ধ থেকে HD 110067 নক্ষত্রটি দেখা যায় । এটি আমাদের সূর্যের মতোই একটি নক্ষত্র এবং যার আকার ও ভর প্রায় ৮০ শতাংশ । নক্ষত্র এবং সংশ্লিষ্ট গ্রহমণ্ডলটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১০০ আলোকবর্ষ (৫.৮ ট্রিলিয়ন মাইল) দূরে Coma Berenices নক্ষত্রমণ্ডলে (উত্তর) অবস্থিত । এ নক্ষত্রের আপাত মাত্রা ৮.৪ এবং বক্রতার ব্যাসার্ধ ১.৯৪আর⊕ থেকে ২.৮৫আর⊕ । গত ২৯শে নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিখ্যাত Nature সাময়িকীতে নতুন এ সৌরজগত নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে । সৌরজগতের গ্রহগুলো নিজ বা কেন্দ্রীয় বা মূল নক্ষত্রের (Host Star) খুব কাছাকাছি থেকে আবর্তন করে । সবগুলো গ্রহই পৃথিবীর ব্যাসের দুই থেকে তিনগুণ । তবে এ গ্রহতন্ত্রের কোনো গ্রহকেই জীবনধারণের জন্য বাসযোগ্য অঞ্চলে (Habitable Zone) পাওয়া যায়নি ৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, গ্রহগুলো গ্যাসীয় হলেও সকলেরই পাথুরে ও বরফের অন্তস্তল বা কেন্দ্রভাগ (Core) এবং হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের বর্ধিত বায়ুমণ্ডল রয়েছে । গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলের গঠন, তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেখানে জল আছে কি-না ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত জানা যাবে ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২০২০ খ্রিস্টাব্দে NASA এর মহাকাশ টেলিস্কোপ Transiting Exoplanet Survey Satellite (TESS) দ্বারা একটি উজ্জ্বল K0 জাতের নক্ষত্র HD 110067 কে প্রদক্ষিণকারী দুটি বহিঃসৌর অভ্যন্তরীণ গ্রহকে প্রথম আবিষ্কারের মাধ্যমে এ সৌরজগতের সন্ধান পান ৷ পরবর্তীতে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ESRA এর CHEOPS বা Characterizing Exoplanet Satellite (CES) মহাকাশ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এ বছর বাকী চারটি বহিঃসৌর গ্রহ আবিষ্কার করেন ৷ অবিশ্বাস্য এ আবিষ্কারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ সৌরজগৎ কিভাবে গঠিত ও বিবর্তিত হয়েছে এবং গ্রহ গঠনের প্রাথমিক পর্যায় ও পরবর্তী বিবর্তন সম্পর্কে মূল্যবান অনেক কিছুই জানা যাবে । বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ সৌরজগতে এমন আরো গ্রহ থাকতে পারে । এখন পর্যন্ত ০৬টি পরিচিত b, c, d, e, f, g গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে । গ্রহগুলোর আকৃতি প্রায় নেপচুনের মতো । তাই এদেরকে উপ-নেপচুন বহিঃসৌর গ্রহ (Sub-Neptune Exoplanet) বলা হয় । উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর চেয়ে বড় ও ভারী এবং নেপচুন বা ইউরেনাসের চেয়ে ছোট ও হালকা গ্রহগুলোকে অতি-পৃথিবী (Super-Earth) বলে । অতি-পৃথিবী গ্রহগুলো বরফ সমৃদ্ধ, জলীয়, এমনকি গলিত লাভায় আচ্ছাদিত, গ্যাসীয়, পাথুরে কিংবা এদের মিশ্রণে তৈরি হতে পারে । সাধারণত পৃথিবীর চেয়ে অতি-পৃথিবী গ্রহগুলোর মাধ্যাকর্ষণ বেশি, বৃহদাকার এবং অত্যাধিক ভর থাকে ৷ আমাদের সৌরজগতে এ ধরনের কোনো গ্রহ নেই ৷ তবে মহাবিশ্বে অন্যান্য নক্ষত্রদের পর্যবেক্ষণ বা জরিপ করার সময় বহিঃসৌর অতি-পৃথিবী গ্রহগুলোকে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ৷ আমাদের সৌরজগতের বাইরে অপার মহাবিশ্বে খুঁজে পাওয়া অন্য কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে এমন গ্রহগুলোকেই বহিঃসৌর গ্রহ (Exoplanet) বলে । এ পর্যন্ত ৫৫০০ টি বহিঃসৌর গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে । যাই হোক, মাতৃনক্ষত্র বা কেন্দ্রীয় নক্ষত্র HD 110067 কে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করা বহিঃসৌর গ্রহগুলোর ঘনত্ব অনেক বেশি যা আমাদের সৌরজগতের সর্ববৃহৎ গ্যাস দানব গ্রহ বৃহস্পতির প্রায় কাছাকাছি । বৃহস্পতি গ্রহ পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৩১৮ গুণ বড় এবং এর রয়েছে বিশাল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি । আবিষ্কৃত এ বহিঃসৌর গ্রহগুলো নির্দিষ্ট জ্যামিতিক ছন্দ মেনেই কেন্দ্রীয় নক্ষত্রের চারপাশে ০৯ থেকে ৫৪ দিনের মধ্যে একবার ঘুরে এসে বছর পূর্ণ করে । প্রতিটি গ্রহ যেমন: অভ্যন্তরীণ গ্রহ b প্রতি ৯.১১৪ দিনে, পরবর্তী গ্রহ c প্রতি ১৩.৬৭৩ দিনে এবং গ্রহ d প্রতি ২০.৫১৯ দিনে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে । এ সময়কালগুলো প্রতিটি পরেরটির প্রায় ১.৫ গুণ, মানে গ্রহগুলো বহিরবয়ব বা আপেক্ষিক অবস্থানে থেকে একটি অনুরণন শৃঙ্খল গঠন করেছে যাকে বলা হয় ৩:২ । অর্থাৎ গতির অনুরণন (Speed Resonance) । এ ক্ষেত্রে নক্ষত্রের সবচেয়ে কাছের (অভ্যন্তরীণ বা প্রথম গ্রহটি) গ্রহ b তিনবার ও পরবর্তী গ্রহ c দুইবার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে । তারপর গ্রহ c তিনবার ও শেষে গ্রহ d দুইবার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে । এছাড়া ‘অনুরণিত শৃঙ্খলে’ (Resonant Chain) গ্রহ e প্রতি ৩০.৭৯৩ দিনে, গ্রহ f প্রতি ৪১.০৫৯ দিনে এবং গ্রহ g প্রতি ৫৪.৭৭০ দিনে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে । পুরো তন্ত্রটি বুধ গ্রহের কক্ষপথের ভিতরে খাপ খাত্তয়া বা মানানসই হতে পারে । নক্ষত্রটির সবচেয়ে ভিতরের চারটি গ্রহ একটি সুনির্দিষ্ট ৩:২ অনুরণনের শৃঙ্খলে নিরবচ্ছিন্নভাবে এক স্বর্গীয় নৃত্য করে চলছে । পাশাপাশি বাইরের দুটি গ্রহ f ও গ্রহ g ৪:৩ অনুরণনে রয়েছে এবং এর অভ্যন্তরীণ গ্রহ প্রতি চারবার ও পরবর্তী গ্রহটি তিনবার কক্ষপথে পূর্ণ আবর্তন করে । সামগ্রিকভাবে, অভ্যন্তরীণ গ্রহ b ছয়বার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে এবং সবচেয়ে বাইরের গ্রহ g একটি পূর্ণ বিপ্লব ঘটায় । এভাবেই নক্ষত্রটির গ্রহগুলোর মধ্যে ছন্দাকারে পর্যায়ক্রমে আকর্ষণীয় প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে । সুতরাং HD 110067 নক্ষত্র এবং সংশ্লিষ্ট গ্রহব্যবস্থায় বহিঃসৌর গ্রহ ছয়টি একে অপরের উপর মাধ্যাকর্ষণীয় প্রভাবের কারণে এতো সুন্দর সামঞ্জস্যের মধ্যে রয়েছে । তবে অন্য কোনো সৌরজগতে এ গ্রহগুলোর মতো এমন বিস্ময়কর ছন্দময় পরিক্রমণ খুব বেশি দেখা যায়নি ৷ গ্রহগুলো তাদের কেন্দ্রীয় নক্ষত্র HD 110067 থেকে এমনই দূরত্বে রয়েছে যা আমাদের সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্বের চেয়েও কম । তাই এ গ্রহগুলোর তাপমাত্রা প্রচণ্ড পরিমাণ এবং সেখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা খুবই কম ।

আদিম বা আদিগ্রহীয় চাকতি (Protoplanetary Disk) হচ্ছে নক্ষত্রের চারপাশে ঘূর্ণায়মান ধূলিকণার মেঘ, যে মেঘের উপাদানগুলো একত্রিত হয়ে পরবর্তীকালে গ্রহ তৈরি করে । আবিষ্কৃত সৌরজগতে কিভাবে গ্রহগুলোর একটি ব্যবস্থা বা তন্ত্র বা পদ্ধতি (System) নিখুঁত গাণিতিক অনুপাতের মধ্যে প্রদক্ষিণ করে ? এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী Rafael Luque বলেন: ”গ্রহগুলোর গঠনকারী আদিগ্রহীয় চাকতি শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক অবস্থার প্রতিফলন । এ ধরনের অনুরণিত শৃঙ্খলগুলো প্রকৃতিতে অত্যন্ত সাধারণ হওয়া উচিৎ, কিন্তু তারা তা নয় । কারণ সৌরজগতের জন্মের পর মহাবিশ্বে ‘ঘনঘন বিশৃঙ্খল ঘটনা’ যেমন ক্ষণস্থায়ী নক্ষত্র, দৈত্যাকার উল্কাপিণ্ডের প্রভাব এবং মহাকাশে বিচরণকারী দানব গ্রহগুলো যে কোনো অনুরণনকে কর্দমাক্ত করে যতক্ষণ না তারা চলে যায়” । উদাহরণস্বরূপ, সৌরজগতের কিছু গ্রহ অতীতে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয় । কিন্তু কমপক্ষে চার বিলিয়ন বছর আগে গ্রহগুলো গঠিত হওয়ার পর থেকে HD 110067 নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে এদের অনুরণন শৃঙ্খল ব্যবস্থাটি নিরবচ্ছিন্নভাবে এখনো টিকে আছে, যা ‘এ ব্যবস্থার বিবর্তন খুব শান্ত, খুব মৃদু হয়েছে’ নির্দেশ করে । সম্ভবত এ ভাবেই গ্রহব্যবস্থা শুরু হয় । আকাশগঙ্গা ছায়াপথে এটি একটি ব্যতিক্রমী লুকানো রত্ন । তবে, সমস্ত গ্রহ ব্যবস্থার প্রায় এক শতাংশ এখনো অনুরণনে প্রদক্ষিণ করছে । হয়তো অপার মহাবিশ্বে এমন কিছু সৌরজগৎ রয়েছে যেগুলোর সন্ধান পেলে সৌরজগৎ ও গ্রহব্যবস্থার সূচনাকালের অবস্থা সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানা যাবে । কারণ, শুধু এ সৌরজগতগুলোই এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে । যদিও প্রায় ৪৫৭ কোটি বছর আগে এক বিশাল আন্তঃনাক্ষত্রিক আণবিক মেঘ এর একটি ক্ষুদ্র অংশের মহাকর্ষীয় পতন থেকে সৌরজগৎ গঠিত হয় ও বিবর্তন ঘটে ৷ ফলে সূর্য এবং বৃহৎ গ্যাসীয় দানব বৃহস্পতি ও শনির মতো অন্যান্য গ্রহগুলোর জন্ম হয় । এভাবেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রায় সকল সৌরজগতের সূচনা হয়েছিল । কিন্তু পরবর্তীতে সময়ের পথ পরিক্রমায় এটি আর সেভাবে থাকেনি ৷ ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের এ অবস্থায় পৌঁছেছে । জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, নতুন গ্রহব্যবস্থাটি আমাদের সৌরজগতের ইতিহাস এবং কিভাবে এটি তার ছন্দ হারিয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করবে । এছাড়া গ্রহগুলোর আকার, ভর, তাপমাত্রা এবং তাদের কেন্দ্রীয় নক্ষত্র থেকে দূরত্বের সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো অন্য কোনো কারণের অনুপস্থিতিতে এদের বিবর্তনকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা অধ্যয়নের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এ গ্রহগুলোকে একে অপরের সাথে তুলনা করতে পারেন ।

সূত্র: https://www.astronomy.com/ (By Alison Klesman), অন্তর্জাল (The Internet), ছবি: https://nccr-planets.ch/

এক বিকেলের অনুভূতি


মায়াবী পড়ন্ত বেলা ৷
শান্ত ও নৈঃশব্দময় পরিবেশ ৷
স্রোতস্বিনী নদী বয়ে চলে অজানা গন্তব্যে ৷
শির উঁচু করা পাহাড়গুলো আকাশ স্পর্শ করতে চায় ৷
তীরে বাঁধা নৌকাটি আপন করে নিয়েছে নিঃসঙ্গতাকে ৷
সাদা তুলা মেঘ নীলিমায় মিলিয়ে যায় ৷
দক্ষিণা বাতাসে ভেসে আসে দারুচিনির সুমিষ্ট ঘ্রাণ ৷
কলসী কাঁখে অষ্টাদশীর প্রাণোচ্ছলতা ৷
শিকারী গাংচিলের তীক্ষ্ণ চোখ হন্য হয়ে শিকার খোঁজে ৷
প্রিয়তমার সাথে ডানা মেলে উড়ে যায় রঙিন প্রজাপতি ৷
সৈকতে লাল কাঁকড়াগুলোর উদ্দাম দৌড় প্রতিযোগিতা ৷
গোধূলি বেলায় পশ্চিমাকাশে আগুন লেগেছে ৷
মন্থর গতিতে শামুকের আঁকাবাঁকা পথচলা ৷
সন্ধ্যাকে আলিঙ্গনের অপেক্ষায় দূর দিগন্ত ৷
ক্লান্ত বলাকা বাড়ি ফেরার পথে ৷
জোনাকির মিটমিটি আলোয় সাঁজ প্রদীপ জ্বলে ৷
ডিঙি নৌকায় লণ্ঠন জ্বেলে নদী অভিমুখে জেলেরা ৷
অস্তগামী সূর্যের দিকে অপলক চেয়ে থাকি ৷
ঐশ্বর্যময় প্রকৃতির এক অনুপম সৌন্দর্য ৷
আবহমান বাংলার শাশ্বত প্রতিচ্ছবি ৷

Visibility


Eyes never lie.
Sweetheart is so in love—
I saw her joy.
Waywardness on that path.
Intense desire for unspoken words.
Sometimes adventurousness.
The silence of the millennium in the depths of steadfast glance.
What as if hundred ask?
I saw affection on the sandy sea beach.
Sometimes the glory of her extraordinary beauty.
Moonlight night with the full moon in secret love tryst (Assignation).
The wailing of a heart burned by the atrocious wildfire of separation.
I saw a leading role in the construction of civilization.
Again ever perk arrogance.
Or the poignant face of defeat.
Nevertheless, her indomitable wend.
Away, far away…
In an unknown world of silence.
But what, she is unbeaten?
At the gentle touch of the beloved the turbulent waves rise in warm blood.
Her life pulse shakes my being.
A heavenly feeling.
Eternal love.

দৃষ্টিপাত


চোখ কখনো মিথ্যা বলে না ৷
হৃদয়েশ্বরী এতো প্রেমে পড়েছে—
আমি তার উল্লাস দেখেছি ৷
ঐ মেঠোপথে দুরন্তপনা ৷
অব্যক্ত কথাগুলোর জন্য তীব্র আকুতি ৷
কখনো দুঃসাহসিকতা ।
অপলক চাহনির গহীনে সহস্রাব্দের নীরবতা ।
কি যেনো শত জিজ্ঞাসা?
বালুকাময় সমুদ্র সৈকতে অনুরাগ দেখেছি ৷
কখনো তার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা ৷
জ্যোৎস্না রাতে পূর্ণিমা চাঁদের সাথে গোপন অভিসার ৷
বিরহের নৃশংস দাবানলে দগ্ধ হৃদয়ের হাহাকার ।
সভ্যতা নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা দেখেছি ৷
আবার কখনো স্পর্ধিত অহংকার ।
কিংবা পরাজয়ের গ্লানিকর মুখচ্ছবি ।
তবুও, তার অদম্য পথচলা ।
দূরে, বহুদূরে…
এক অজানা নৈঃশব্দের জগতে ।
তবে কি, সে অপরাজিতা?
প্রেয়সী’র নম্র স্পর্শে উষ্ণ রক্তে উত্তাল ঢেউ উঠে ।
তার প্রাণস্পন্দন আমার সত্তাকে নাড়া দেয় ।
এক স্বর্গীয় অনুভূতি ।
শাশ্বত ভালোবাসা ৷