অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (Atish Dipankar Shrigyan)


বাঙালি জাতিসত্তার রয়েছে হাজার বছরেরও বেশি সুপ্রাচীন ইতিহাস । পৃথক জাতি হিসেবে পথচলা থেকে শুরু করে আজ অবধি ধর্ম, দর্শন, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ নানাবিদ কর্মকাণ্ড এবং প্রাত্যহিক জীবনাচারে বাঙালির রয়েছে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য । শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় জীবন ও সাহিত্যে উৎকর্ষতার সুদৃঢ় ভিত সৃষ্টি করে প্রাচীন বাংলায় এক অতি উন্নত মানের সভ্যতা এবং সংস্কৃতি গড়ে উঠে । যেখান থেকে পূর্ব-পুরুষদের অনুপ্রেরণা নিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে এখনো আমরা আমাদের অস্তিত্ব, সে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে বহন করে চলছি । ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রয়েছে আমাদের আত্ম-পরিচয়, মাতৃভাষা, স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ, জাতীয়তা, নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী, ত্যাগ, মূল্যবোধ, সুখ্যাতি, সমৃদ্ধি এবং বিভিন্ন দিক থেকে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত । যা আমাদের গৌরবের বিষয় । নানা জাতি-ধর্মের মানুষের বসতি এখানে এবং অনেক কীর্তিমান, স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব এবং সু-মহান গুণীজনের নাড়ির শিকড় এ বাংলায় । তেমনি একজন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান জন্ম নিয়েছেন বাংলার মাটিতে ।

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান প্রাচীন বাংলার একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বৌদ্ধ দার্শনিক, প্রখ্যাত মহাপণ্ডিত, শিক্ষাবিদ এবং সমাজ সংস্কারক । যিনি পাল শাসনামলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধধর্মপ্রচারক ছিলেন । প্রাচীন ভারতে ১৬টি মহাজনপদ বা অঞ্চলের মধ্যে একটি শক্তিশালী জনপদ হচ্ছে মগধ । বর্তমান ভারতের বিহারের পাটনা, গয়া এবং বাংলার কিছু অংশ নিয়ে তৎকালীন সময়ে এ রাজ্য গঠিত হয়েছিল । সে সময় মগধ এর রাজধানী ছিল রাজগৃহ এবং পরবর্তীতে পাটলিপুত্র । মগধের প্রথম রাজা ছিলেন হর্য্যঙ্ক রাজবংশের রাজা ভট্টিয় বা মহাপদ্ম । অঙ্গরাজ্যের অধিপতি অঙ্গরাজ রাজা ভট্টিয়কে যুদ্ধে পরাজিত করে মগধকে অঙ্গের করদ রাজ্যে পরিণত করেন । পরবর্তীতে রাজা ভট্টিয় বা মহাপদ্মের পুত্র ১৫ বছর বয়সী বিম্বিসার (সেনিয়) অঙ্গরাজ্যের সে সময়কার রাজা উদয়িনকে যুদ্ধে পরাজিত করে মগধের ঐতিহাসিক রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন, যিনি ৫৪২ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪৯২ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত মগধ রাজ্য শাসন করেন । ভারতবর্ষে পালযুগে মগধের পূর্ব সীমান্তবর্তী প্রদেশ অঙ্গদেশের পূর্ব প্রান্তের সামন্তরাজ্য সাহোর এর ভাগলপুরের রাজ্যকেন্দ্র বা রাজধানী বিক্রমপুরীতে তথাপি বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামের কাঞ্চনধ্বজ রাজপ্রাসাদে বঙ্গাধিপতি পাল রাজাদের অধীনস্ত গৌড়ীয় সামন্ত রাজা (চন্দ্রবংশীয় রাজা) কল্যাণশ্রী এর ঔরসে রাণী প্রভাবতী দেবীর গর্ভে অতীশ দীপঙ্কর ৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন । উল্লেখ্য: ভাগলপুরী বা ভাগলপুর (Bhagalpur) হচ্ছে বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের ভাগলপুর জেলার একটি শহর এবং পৌর কর্পোরেশনাধীন এলাকা । যদিও তৎকালীন সময়ে সাহোর, সমস্ত বিহার ও বঙ্গদেশ পাল বংশীয় রাজাদের অধীন ছিল । সাহোর এর অধীনে ছিল বিক্রমপুর নগর । দশম-একাদশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করের পারিবারিক নাম হচ্ছে  আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ । তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই পদ্মগর্ভ, অতীশ দীপঙ্কর হচ্ছেন দ্বিতীয় এবং ছোট ভাই শ্রীগর্ভ । কথিত আছে, অতীশ দীপঙ্কর খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেন এবং তার পাঁচজন স্ত্রীর গর্ভে মোট ৯ জন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে । এদের মধ্য থেকে পুন্যশ্রী নামে একজন পুত্রের নামই শুধু জানা যায় ।

অতীশ দীপঙ্করের মা প্রভাবতী দেবী ছিলেন একজন ব্রাহ্মণকন্যা । শৈশবে মায়ের কাছ থেকেই হিন্দুদের প্রাচীনতম ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ এর প্রথম পাঠ নেন । বাবার কাছ থেকে শিক্ষা নেন তন্ত্রোপসনা ও চিকিৎসাবিদ্যা । মা-বাবার পাশাপাশি স্থানীয় বজ্রাসন বিহারে অতীশ দীপঙ্কর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন । হস্তশিল্প, ব্যাকরণ এবং গণিতশাস্ত্রে বিস্ময়কর দক্ষতা অর্জন করেন প্রতিভাময়ী এ মহান ব্যক্তি । পরবর্তীকালে মহাবৈয়াকরণ বৌদ্ধ পণ্ডিত জেত্রির পরামর্শ অনুযায়ী ভারতের মগধের নালন্দায় শাস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করে অল্পদিনের মধ্যেই বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করে তিনি ত্রিপিটক ভৈবাষিক দর্শন ও তান্ত্রিক শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন । আচার্য বোধিভদ্র তাকে ১২ বছর বয়সে শ্রমণ রূপে দীক্ষা দেন এবং পণ্ডিত বিহারের মহাধ্যক্ষ আচার্য্য তিলোপাহ প্রজ্ঞাভদ্রের সান্নিধ্য লাভ করেন । আচার্য বোধিভদ্রের গুরুদেব অবধূতিপাদের নিকট থেকে সর্ব শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন (মহাযান বৌদ্ধ মতবাদে সমৃদ্ধ হন) করেন এবং বিক্রমশীলা বিহারের উত্তর দ্বারের দ্বারপণ্ডিত নাঙপাদের নিকটে তন্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করেন । মগধ রাজ্যের ওদন্তপুরী বিহারে মহাসাঙ্ঘিকাচার্য শীলরক্ষিতের কাছে উপসম্পদা (সন্ন্যাসব্রত) দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং এ সময়ে তিনি ‘দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান’ নামে আখ্যায়িত হন । আচার্য বিদ্যাকোকিলের কাছ থেকে শূন্যবাদের শিক্ষা নিয়ে ‘শূন্য থেকে জগতের উৎপত্তি’ এ তত্ত্ব (শূন্যবাদ) প্রচার করেন । এক পর্যায় তিনি সংসারের প্রতি বিরাগভাজন হয়ে দৈনন্দিন জীবন ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক চর্চা, যোগ, ভাষা, দৈব তত্ত্ব এবং ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণগিরি বিহারে গমন করে জ্ঞানী ভিক্ষু রাহুলগুপ্তের নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । তার কাছ থেকে রপ্ত করেন হীনযানী ত্রিপিটক, বৈশেষিক দর্শন, মহাযানী ত্রিপিটক, মাধ্যমিক ও যোগাচারীদের অধিবিদ্যা, বৌদ্ধধর্মের অনুধ্যানিক বিজ্ঞান এবং গুঢ়তত্ত্ব । সে কারণে অতীশ দীপঙ্কর ‘গুহ্যজ্ঞানবজ্র’ উপাধিতে ভূষিত হন । এছাড়া চর্যাপদের পদকর্তা শান্তিপা এর কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং আচার্য ধর্মরক্ষিত কর্তৃক সর্বশ্রেষ্ঠ ভিক্ষুদের শ্রেণিভুক্ত হয়ে একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী পণ্ডিতের স্বীকৃতি লাভ করেন । ১০১১ খ্রিষ্টাব্দে মালয়দেশের (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ) অন্তর্গত সুবর্ণদ্বীপে এসে আচার্য চন্দ্রকীর্তির নিকটে বৌদ্ধ দর্শনশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয় এবং কল্যানমিত্র আচার্য ধর্মপাল বা ধর্মকীর্তির নিকট বোধিচিত্ত বা বোধিচিত্যোৎপাদ গবেষণা ও সাধনা (মহাযানী প্রশিক্ষণ লাভ) করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । এখানে তিনি বৌদ্ধ ত্রিপিটক, প্রজ্ঞাপারমিতা, ন্যায়-দর্শনাদি, গুহ্য বিদ্যা এবং সিদ্ধাচার্যদের যোগ তন্ত্র ইত্যাদি সাধনা ও আত্মস্থ করেন । এছাড়া অন্যান্য পণ্ডিতগণ যেমন; সুখগতি, ধর্মমিত্র, কসলসম্ভব, সুরবজ, দেবমতী, রবিগুপ্ত, প্রজাভদ্র এবং গুপ্তসারের সাথে তিনি প্রায়ই মতবিনিময় করতেন । সেখানে প্রায় ১২ বছর শিক্ষাগ্রহণের পর ৪৩ বছর বয়সে মগধে ফিরে তিনি পালরাজ প্রথম মহীপালের অনুরোধে বিক্রমশিলা (ভাগলপুর, বিহার) মহাবিহারের আচার্যপদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । পশ্চিমবঙ্গের বিহার প্রদেশে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহার ওদন্তপুরী এবং সোমপুর বিহারেও তিনি প্রায় ১৫ বছর শিক্ষকতা করেন । সোমপুর বিহারে অবস্থানকালেই তিনি মধ্যমকরত্নপ্রদীপ গ্রন্থের অনুবাদ করেন । তিব্বতের বৌদ্ধ রাজা লাঃ লামা ইয়োসি হোড্ (লাহ্লামা-যে-শেস্) তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের উন্নতি বা আদর্শকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে অতীশ দীপঙ্করকে তিব্বতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে স্বর্ণোপহার এবং পত্রসহ বিক্রমশীলা মহাবিহারে দূত প্রেরণ করেন । অতীশ দীপঙ্করকে বার্তা দেন যে, তিনি তিব্বতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করা হবে । যদিও, নির্লোভ-নিরহঙ্কার অতীশ দীপঙ্কর বিনয়ের সাথে বৌদ্ধ রাজার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন । বৌদ্ধ রাজা লাঃ লামা ইয়োসি হোড্ এর মৃত্যুর পর তারই ভ্রাতুষ্পুত্র লহা-লামা-চং-ছুপ জ্ঞানপ্রভ (৯৮৪ – ১০৭৮) তিব্বতের রাজা হন এবং তার একান্ত অনুরোধে ১০৪১ খ্রিষ্টাব্দে অতীশ দীপঙ্কর নেপাল হয়ে তিব্বত যাওয়ার পথে নেপালের রাজা অনন্তকীর্তি তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেন ও সেখানে ‘খান বিহার’ নামক একটি বৌদ্ধবিহার স্থাপন করেন । নেপালের রাজপুত্র পদ্মপ্রভ অতীশ দীপঙ্করের কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন । ১০৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের গুজে নামক স্থানে তিব্বতরাজ লহা-লামা-চং-ছুপ অতীশ দীপঙ্করকে রাজকীয় অভ্যর্থনার মাধ্যমে থো লিং বিহারে নিয়ে যান । তাকে ‘রাগদুন’ নামক এক বিশেষ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের সুরের মূর্ছনার পাশাপাশি রাজ প্রতিনিধির হাতে চীনা ড্রাগনের ছবি আঁকা পাত্রে চা পান করান । পরবর্তীতে রাজপ্রাসাদে এক মহানুষ্ঠানের মাধ্যমে পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে হো-বো-জে (স্বামী ভট্টারক বা সর্বোচ্চ গুরু) উপাধিতে ভূষিত করেন । শ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক অতীশ দীপঙ্করের মূল কর্ম কেন্দ্রস্থল ছিল তিব্বতের গুরুত্বপূর্ণ থো-লিং বিহার । তিব্বতের সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং সাহিত্যে পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় অবদান রয়েছে । তিনি তিব্বতে থাকাবস্থায় সর্বত্র ঘুরে ঘুরে বৌদ্ধধর্ম প্রচার, বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক সংস্কার, তিব্বতী বৌদ্ধধর্মে প্রবিষ্ট তান্ত্রিক পন্থার অপসারণের চেষ্টা করে বিশুদ্ধ মহাযান মতবাদের প্রচার (যার মূলমন্ত্র ছিল মানুষের কল্যাণ ও মুক্তিসাধন), বৌদ্ধ ক-দম্-পা (গে-লুক) নামের লামা সম্প্রদায়ের (তিব্বতের বৌদ্ধ ভিক্ষু) উদ্ভব, বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় পোন ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত করে শৃঙ্খলা ও তন্ত্রচর্চার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন । তিব্বতে বহু প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথি আবিষ্কার করেন এবং নিজ হাতে সেগুলোর প্রতিলিপি তৈরি করে বঙ্গদেশে প্রেরণ করেন । কিন্তু তার মূল সংস্কৃত ও বাংলা রচনার প্রায় সবগুলোই বর্তমানে বিলুপ্ত, যদিও তিব্বতী ভাষার অনুবাদগুলো সংরক্ষিত আছে । বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসা এবং কারিগরিবিদ্যা সম্পর্কে তিব্বতী ভাষায় বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেন । সংস্কৃত এবং পালি গ্রন্থাবলী তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করেন । এছাড়া অসংখ্য গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ এবং সম্পাদনা করেন । তিব্বতের ধর্ম, রাজনীতি, জীবনীগ্রন্থ এবং স্তোত্রনামাসহ তিব্বতী মহাগ্রন্থ ‘তাঞ্জুর’ সংকলন করেন । তিনি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বোধিপথপ্রদীপ’ রচনা করেন । অতীশ দীপঙ্কর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: চর্যা-সংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, মধ্যমোপদেশ, সংগ্রহগর্ভ, হৃদয়-নিশ্চিন্ত, বোধিসত্ত্ব-মণ্যাবলি, বোধিসত্ত্ব-কর্মাদিমার্গাবতার, শরণাগতাদেশ, মহযান-পথ-সাধন-বর্ণ-সংগ্রহ, শুভার্থ-সমুচ্চয়োপদেশ, দশ-কুশল-কর্মোপদেশ, কর্ম-বিভঙ্গ, সমাধি-সম্ভব-পরিবর্ত, লোকোত্তর-সপ্তকবিধি, গুহ্য-ক্রিয়া-কর্ম, চিত্তোৎপাদ-সম্বর-বিধি-কর্ম, শিক্ষাসমুচ্চয়-অভিসাম্য, মধ্যমকরত্নপ্রদীপ, প্রজ্ঞাপারমিতাপিন্ডার্থপ্রদীপ, একবীরসাধন এবং বিমল-রত্ন-লেখনা ইত্যাদি । বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাগীতি বা চর্যাপদের আবিষ্কর্তা, বাঙালি ভারততত্ত্ববিদ, সংস্কৃত বিশারদ, সংরক্ষণবিদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা ও রামচরিতম্ বা রামচরিতমানস পুঁথির সংগ্রাহক বিখ্যাত পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং ইতালির খ্যাতনামা প্রাচ্যবিদ, ইন্দোলজিস্ট, পূর্ব এশীয় গবেষণা পণ্ডিত ও তিব্বতী সংস্কৃতি-বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ গ্যুসেপ তুচ্চি (Giuseppe Tucci) অতীশ দীপঙ্করের অনেকগুলো বই আবিষ্কার করেন । জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বাগ্মিতা, যুক্তি, অগাধ পাণ্ডিত্য এবং তিব্বতী ভাষায় নানাবিদ গ্রন্থাবলী রচনা করার কারণে তিব্বতীরা অতীশ দীপঙ্করকে ‘অতীশ’ উপাধীতে ভূষিত করেন । যার অর্থ সর্বশ্রেষ্ঠ বা মহামানব বা শান্তি । তিব্বতবাসী সনাতন (হিন্দু) ধর্মের নবম অবতার ও বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক মহামতী গৌতম বুদ্ধের (সিদ্ধার্থ) পরই অতীশ দীপঙ্করকে শ্রেষ্ঠ গুরু হিসেবে সম্মান করেন । তারা তাকে পরম পূজনীয় এবং সর্বপবিত্র মহাপ্রভু (জোবো ছেনপো) হিসেবে মান্য করেন । তারা মনে করেন, অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতের জনগণের প্রার্থনার জবাব দিতে দেবতার প্রতিমূর্তি হয়ে এসেছেন এবং তাদের মঙ্গল, কল্যাণ আর প্রশান্তির জন্য । তিনিই হচ্ছেন গৌতম বুদ্ধের প্রতিনিধি এবং সুদূর হিমালয় পর্বত চূড়ার ঊর্ধ্ব আকাশে দ্যুতিমান একটি শুকতারা । ১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের লাসা নগরীর অদূরে চে-থঙের দ্রোলমা লাখাং তারা মন্দিরে (বিহারে) শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । অতীশ দীপঙ্করের আধ্যাত্মিক পুত্র দ্রোমতন তার শিষ্যদেরকে সাথে নিয়ে তিব্বতে অতীশ দীপঙ্করের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন এবং ১০৫৫ খ্রিষ্টাব্দে সেখানে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে জুন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘ এর সভাপতি শ্রীমৎ বিশুদ্ধানন্দ মহাথের গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ সহযোগিতায় সহস্রাধিক বছরের বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালি, মহাজ্ঞানী অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের পবিত্র চিতাভস্ম বা দেহভস্মকে স্মৃতিস্বরূপ হিসেবে চীন থেকে ঢাকায় ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে এনে সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন ।

রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জের অন্তর্গত ‘বিক্রমপুর’ । প্রাচীন বাংলার একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল । ধারণা করা হয়, বৈদিক যুগ (ছয় হাজার বছরেরও বেশি পূর্বেকার বেদবর্ণিত সময়কাল) থেকে ভাওয়াল এবং সোনারগাঁও (সুবর্ণ গ্রাম) রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পূর্বে এটিই ছিল বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী । উল্লেখ্য যে, ভাওয়াল জমিদার বংশের পূর্বপুরুষগণ মুন্সীগঞ্জের অন্তর্গত বজ্রযোগিনী গ্রামের বিখ্যাত পুশিলাল শোত্রীয় ব্রাহ্মণগোত্রের বাসিন্দা ছিলেন । বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা পার হয়ে সুসং পাহাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগের মধ্যে জয়ানশাহি গহীন অরণ্য অঞ্চলের উত্তরাংশকে মধুুপুর অরণ্য অঞ্চল এবং দক্ষিণাংশকে ভাওয়াল অরণ্য অঞ্চল বলা হয় । দ্বাদশ শতাব্দীর পরবর্তীকালে প্রায় ছয় শত বছর পাঠান এবং মুঘল শাসকরা ভাওয়াল অঞ্চল শাসন করেন এবং এ আরণ্যকের মাঝখানে গড়ে উঠে এক প্রশাসনিক অঞ্চল, যেটি ‘ভাওয়াল পরগণা’ নামে পরিচিত । উত্তরে আটিয়া ও আলেপসিং পরগণা, দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা, পূর্বে লক্ষ্যানদী ও মহেশ্বরদি পরগণা এবং পশ্চিমে কাশিমপুর ও দুর্গাপুর পরগণা । বর্তমান গাজীপুর, টাঙ্গাইল এবং ঢাকা জেলার কিছু অংশ ছিল ভাওয়াল পরগণার অন্তর্গত । প্রাচীন ভাওয়াল পরগনা যেটি সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৭৩-২৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) মৌর্য সাম্রাজ্যের অধিকারে ছিল । যাই হোক, সে প্রাচীন কাল থেকেই বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চা এবং পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক প্রভাবের জন্য বিক্রমপুর বেশ সুপরিচিত । প্রাচীন বঙ্গের (বঙ্গ জনপদের) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল বিক্রমপুর । বিক্রমপুর নামের ‘বিক্রম’ অর্থ হচ্ছে সাহস বা বীরত্ব এবং ‘পুর’ অর্থ হচ্ছে নগর বা এলাকা । ধারণা করা হয়, বিক্রমপুর নামটির উৎপত্তি বিক্রমাদিত্য থেকে । বিক্রমাদিত্য এর অর্থ হচ্ছে সূর্যের প্রতাপ । মুন্সীগঞ্জ তথাপি বিক্রমপুর এক অতি প্রাচীনতম জনপদ । নবদ্বীপ, গৌড়, সোনার গাঁ, সপ্তগ্রাম এবং ঢাকা প্রভৃতি স্থানসমূহ পরিচিত ও খ্যাতি লাভ করার অনেক আগে থেকেই বিক্রমপুর শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, শিল্প, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নগরী হিসেবে এর সুদীর্ঘ ইতিহাসের কারণে ব্যাপক পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে । মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান প্রভৃতি স্থানসমূহ বিক্রমপুরের অনেক পরে খ্যাতি অর্জন করে । প্রাচীন কাল থেকেই কালের পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন শাসকগণ শাসন করেছেন এ জনপদ বা অঞ্চলকে । যার পিছনে রয়েছে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ আর হৃদয় বিদারক এক মর্মান্তিক রক্তপাতের ইতিহাস! নানা জাতি-ধর্মের মানুষের বসতি এখানে । অনেক জ্ঞানী, গুণী এবং বিশিষ্ট জনের জন্ম মুন্সীগঞ্জে । মুন্সীগঞ্জের রয়েছে হাজার বছরের অর্জিত এক ঐতিহাসিক গৌরব । আর এ মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের বজ্রযোগিনী গ্রামে রয়েছে বৌদ্ধ বাঙালি পণ্ডিত, বৌদ্ধধর্মপ্রচারক, মহাতান্ত্রিক এবং জ্ঞানতাপস অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের বাস্তুভিটা বা ভিটেমাটি । যেটি ‘পণ্ডিত ভিটা’ নামে পরিচিত । তবে, অতীতে কেউ কেউ এটিকে ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ নামে বিবেচনা করতেন । কারণ, অতীশ দীপঙ্কর সন্ন্যাস গ্রহণের ফলে তৎকালীন বিভিন্ন সমাজের অনেকে তাকে নাস্তিক হিসেবে অভিহিত করতেন । তারা মনে করতেন বৌদ্ধরা ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস করেন না । অতীশ দীপঙ্করের জন্মসহস্রবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার জন্মস্থান ‘পণ্ডিত ভিটায়’ বৌদ্ধরীতিতে একটি পবিত্র স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে । যেটি সাদা রঙের চতুর্মুখী গোলাকার মঠ । এটিকে অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতি চৈত্য বা অতীশ দীপঙ্কর শান্তি স্তূপা বলা হয় । পাথর দ্বারা এর কারুকার্য করা হয়েছে । প্রায় ৬০ ফুট গভীরে পাইলিং বা স্তূপাকার করা চারতলা বিশিষ্ট কাঠামোয় তৈরি মঠের নিচে (স্মৃতি চৈত্যে) সংরক্ষিত আছে চীন থেকে নিয়ে আসা অতীশ দীপঙ্করের চিতাভস্ম বা দেহভস্ম । এটিকে ঘিরেই অবস্থিত পবিত্র উপাসনালয় বা পীঠস্থান । পবিত্র স্মৃতিস্তম্ভের চত্বরে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের চিরায়ত প্রতীক ২টি সিংহ মূর্তি । ছোট ছোট কয়েকটি চীনা বাঁশ গাছ । চীনা স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে নির্মিত হয়েছে ছোট একটি মন্দির (তিব্বতীয় ড্রাগন খচিত), প্রেক্ষাগৃহ, গ্রন্থাগার এবং দক্ষিণ দিকের শেষপ্রান্তে একটি একতলা ভবন । কখনো ঘ্রাণ পাওয়া যায় ধূপ-কর্পূরের সু-গন্ধ । অনাবিল সুন্দর ও নিভৃত পল্লীর চমৎকার মনোমুগ্ধকর পরিবেশ । বিভিন্ন জাতের ফুল গাছের সমারোহ । সত্যিই এক নান্দনিক দৃশ্য । আশেপাশে ফলকের মধ্যে লেখা আছে অতীশ দীপঙ্করের জীবনী ও বাণী । বিশিষ্ট জনের উক্তি বা বাণী । পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক, বাইবেল, আল-কোরআন এবং গীতা থেকে নেয়া বিভিন্ন বাণী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । আঙ্গিনার চারপাশে সবুজ বৃক্ষরাজি, বেশ কয়েকটি উঁচু তালগাছ, পাশেই সড়ক, কচুরিপানা ভর্তি খাল, পুষ্করিণী, অদূরে চাষযোগ্য কৃষিজমি এবং কয়েকটি বসত বাড়ি । বৌদ্ধ মহাচার্য অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের সম্মানার্থে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে চীন সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় তিব্বতের নকশা (Model) অনুকরণে স্মৃতি স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয় । অতীশ দীপঙ্কর শান্তি স্তূপা বা অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতি চৈত্যের মূল স্থপতি হচ্ছেন সংস্কৃতিকর্মী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণকারী, শিল্প-সমালোচক, প্রাবন্ধিক, কবি এবং স্থপতি রবিউল হোসাইন । পরবর্তীতে এটির স্থাপত্যে কিছু পরিবর্তন এনে এর নকশা তৈরি করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান স্থপতি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া । অতীশ দীপঙ্করের ভিটেমাটি বা পবিত্র শান্তি স্তূপাটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে । বৌদ্ধমত প্রচার ও সংস্কারের জন্য বিখ্যাত পণ্ডিত এবং বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারক অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের অবদানকে স্মরণ করা হয় কৃতজ্ঞচিত্তে । অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের চির ভাস্বর অবদান এবং অমর মহাত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ তার স্মৃতিকে চির অম্লান ও জাগরিত রাখার জন্য এখানে একটি বিদ্যাপীঠ ‘অতীশ দীপঙ্কর আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়’ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে । এছাড়া মুন্সীগঞ্জে একটি অতীশ দীপঙ্কর গণ পাঠাগার ও মিলনায়তন রয়েছে । বাংলাদেশে ঢাকা মহানগরীর বনানীতে পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের নামানুসারে অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Atish Dipankar University of Science and Technology) নামে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে । ঢাকায় অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ কার্যালয় (Atish Dipankar Research Council Office), রাজধানীর উপকন্ঠে অতীশ দীপঙ্কর মহাসড়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হল এবং কানাডাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিব্বতীদের অতীশ দীপঙ্কর বৌদ্ধ ধ্যান কেন্দ্র (Atish Dipankar Buddhist Meditation Center) রয়েছে । ব্যক্তিগত ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রতিবছর নানাবিদ অনুষ্ঠানাদিসহ বিভিন্ন শাখায় ‘অতীশ দিপঙ্কর শ্রীজ্ঞান’ নামে স্বর্ণপদক বা পুরস্কার প্রদান করে থাকে । অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘শ্রীজ্ঞান’ । ইংরেজী নাম Atish: The Eye Of Asia । প্রযোজক: শহীদ-ই-হাসান তুহিন । পরিচালক: নিতেশ সি দত্ত ।

অতীশ দীপঙ্কর তার শিক্ষকদের সরাসরি সান্নিধ্য পেয়ে ও জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে মৈত্রেয়নাথ, নাগার্জুন, বোধিভদ্র, আর্যদেব, শান্তিদেব, শান্তরক্ষিতের মতো অনেক প্রতিথযশা দার্শনিকের চিন্তাধারার ভেতর থেকে নিজের পথ খুঁজেছেন । বিক্রমশীলা মহাবিহারে সদর দরজার ডানপাশে প্রভাবশালী বৌদ্ধ শিক্ষক-দার্শনিক, সাতবাহন রাজবংশের রাজা ইয়াযনা শ্রী সাতাকর্ণী (Yajna Sri Satakarni) এর উপদেষ্টা ও ‘মহাযান’ বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমিক শাখার প্রতিষ্ঠাতা নাগার্জুনের (আনুমানিক ১৫০ – ২৫০ খ্রিঃ) ছবি অঙ্কিত রয়েছে এবং বামপাশে অঙ্কিত রয়েছে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের ছবি । ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত চলা বিবিসি এর একটি জরিপ প্রতিবেদনে সর্বকালের সেরা বাঙালির তালিকায় তাকে ১৮তম ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে । অসামান্য জ্ঞানের অধিকারী কীর্তিমান এ মহৎপুরুষ আমাদের গর্ব । জ্ঞান তাপস অতীশ দিপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের কর্ম, গুণ ও চিরভাস্বর অবদানের জন্য মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে । তিনি মুন্সীগঞ্জ তথাপি বিক্রমপুর, বাংলাদেশ, বাঙালি এবং সারাবিশ্বের মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস । অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান নামের অর্থ হচ্ছে ‘যার জ্ঞান আলোর ন্যায় জ্বলে’ । মহাকালের স্রোতধারায় শত শত বছর কেটে গেলেও এখনো মহাপুরুষ অতীশ দীপঙ্করের জ্ঞানের দীপ শিখা প্রজ্জ্বলিত এবং চির শাশ্বত । বাংলার মাটিতে জন্ম নেয়া এ সূর্য সন্তান জ্ঞানচর্চাকারী অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান এমনই এক প্রদীপ; যিনি জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে প্রেম, ভালোবাসা, সর্বজীবে দয়া, অহিংসা, অসাম্প্রদায়িকতা, বিনম্রতা, ত্যাগ, শান্তি এবং মানবতাই একমাত্র মুক্তির পথ-  যা আমাদেরকে শৈশব থেকে মৃত্যু অবধি এ শিক্ষাই দেন । তার সৃষ্টিশীল প্রতিভা, বৈচিত্র্যময় কর্ম এবং বিশিষ্ট গুণাবলী দ্বারা জ্ঞানের আলোর মহিমায় মহিমান্বিত করেছে এ জগৎকে । শান্তি, সুন্দর, কল্যাণ এবং মানবতার জন্য তিনি একজন পথপ্রদর্শক । তিনি অমর । এটিই সত্য । চিরসত্য তার অমিয় বাণী: —  ”সার্থক অর্জন হচ্ছে স্বার্থহীনতা এবং শ্রেষ্ঠ যোগ্যতা আত্মনিয়ন্ত্রণ । মহানতম গুণ হচ্ছে অন্যের সেবা আর সর্বোত্তম ধর্মীয় অনুশাসনের নাম নিরবচ্ছিন্ন বৌদ্ধিক জাগরণ । সফল ঔষধ নিজেকে সবকিছু থেকে মুক্ত রাখা এবং শ্রেষ্ঠ কর্ম হচ্ছে পার্থিব পথের অনুসরণ না করা । শ্রেষ্ঠ মঙ্গল হচ্ছে প্রশান্ত হৃদয় এবং সর্বোত্তম প্রচেষ্টা হচ্ছে ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা না করা । শ্রেষ্ঠতম ধ্যান হচ্ছে কিছু আকড়ে না ধরে যেতে দেয়া আর দৃশ্যমানের মধ্য দিয়ে সত্যকে দেখতে পারাই শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা ।”

* তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, http://www.lrb.gov.bd/, বাংলাপিডিয়া, https://roar.media/bangla/ , অন্তর্জাল (The Internet) । *ছবি: নিজ ।

https://www.atishdipankar.com/home

https://web.facebook.com/muhammadashraful.alam/posts/pfbid0JHdF9sCW5v5yoBzvXP1jW7P43Gjp9BU2xbJCDEuV3jMnH1GdVDRuwQwFSvv93KQ5l

Leave a comment